নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৪, ২০২০
১০:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০২০
১০:৫৪ অপরাহ্ন
সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জ। স্থানীয়রা এ জেলাটিকে বিভাগের ‘হটস্পট’ (অতি ঝুঁকিপূর্ণ) বলেই মনে করছেন। ‘হটস্পট’-এর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এরপরই যথাক্রমে রয়েছে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার অবস্থান। সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলা আপাতত নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। তবে এ অবস্থা ধরে রাখতে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি কার্যকর ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার জন্য জেলার সচেতন বাসিন্দারা অনুরোধ জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সিলেট বিভাগে বর্তমানে ৫৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ২৬ জন, সুনামগঞ্জে ১৫ জন, সিলেটে ১১ জন এবং মৌলভীবাজারে ৫ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চার জেলার বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে সিলেটে বিশেষত নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা ব্যক্তির মধ্যেই তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় এখনো বাইরের বাসিন্দারা সিলেট বিভাগের চার জেলায় অবাধে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া এলাকায় আসা এসব ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি আগতদের অনেকে হাওরাঞ্চলে ধানকাটার শ্রমিক হিসেবেও নিয়োজিত হচ্ছেন বলে হাওরপাড়ের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন।
হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, এমন অনেকেই ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরেছেন। যেহেতু পর্যাপ্ত মাত্রায় করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হচ্ছে না, তাই নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতদের মধ্যে কারা করোনা আক্রান্ত আর কারা নন, এ বিষয়ে কারও কোনো ধারণা নেই। অথচ আগত ব্যক্তিরা দিব্যি ধান কাটা থেকে শুরু করে গ্রামের ভেতরে মানুষজনদের সঙ্গে অবাধে মেলমেশা করছেন। তাই এঁদের মাধ্যমে এলাকায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেভাবেই হোক দ্রুত তাঁদের ঘরবন্দী করা না গেলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে। পাশাপাাশি পাড়া-মহল্লা, হাটবাজার ও হাওরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কোনো অবস্থাতেই যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযথা কেউ বাইরে চলাচল না করতে পারেন, সেটি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণের মধ্যে তাঁরা দুটো বিষয়কে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন। প্রথমত প্রবাসীদের দ্বারা করোনাভাইরাসের বিস্তার এবং দ্বিতীয়ত নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফেরাদের দ্বারা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া। দেখা গেল, দ্বিতীয় কারণটিই এখন বেশি ভোগাচ্ছে। তাই এখন ‘লকডাউন’ শতভাগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। হাওর অধুষিত অঞ্চলের দুজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিলেট মিররকে জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে সম্প্রতি ফিরেছিলেন। তাই নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তাঁরা যেন কোনো অবস্থাতেই ধান কাটতে হাওরে যেতে না পারেন, সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লকডাউনের আগে ও পরে কিছু লোক ফাঁকি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেট বিভাগের চার জেলাতেই চলে এসেছেন। তবে এখন কড়াকড়ি করা হয়েছে। হবিগঞ্জের একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকেই বাড়িতে চলে আসায় ঝুঁকি বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাড়ি বিশেষত হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে। এ কারণে ক্রমশ সিলেট বিভাগ করোনাভাইরাসের বিস্তারে অতি ঝুঁকির্পূণ হয়ে উঠছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতরা যেন স্বেচ্ছা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন, সেটা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এটি সুনামগঞ্জে কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।’ হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘হবিগঞ্জে যেন করোনাভাইরাসের বিস্তার আর না ঘটে, সেজন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষত সবাইকে ঘরে রাখতে প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’