সময় কাটছে না প্রবীণদের

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ২৭, ২০২০
১০:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২০
০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন



সময় কাটছে না প্রবীণদের

ছবি: প্রতীকি

করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন প্রবীণেরা। ঘরেতে যেন তাঁদের সময়ই কাটছে না। অনেক প্রবীণ আবার পরিবারের কারও কথা না শোনে নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে বাসার বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটিও হচ্ছে। কয়েকজন প্রবীণ জানিয়েছেন, ‘লকডাউন’-এর কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে। এখন বাইরে বেরোনোর জন্য কেবল মন আনচান করে। এরপরও বয়স বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা, এমন নয়জন প্রবীণের সঙ্গে সিলেট মিরর-এর এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কথা হয়। তাঁদের বয়স ৫৭ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। তাঁরা জানান, করোনোভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সবাই এখন ঘরবন্দী সময় কাটাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে-পরের রুটিনে তাঁদের বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আগে সকাল ও বিকেল বেলা তাঁরা নিয়মিত হাঁটতে বেরোতেন। এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। ঘরে থাকতে থাকতে তাঁদের এখন আর ভালো লাগছে না। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁরা বাসার বাইরে যাচ্ছেন না। যদিও এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। অনেক প্রবীণ আবার পরিবারের সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে এক গুয়েমি করে বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন।

সিলেট নগরের সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু বক্করের বয়স বাষট্টি পেরিয়েছে গত মাসে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। আলাপকালে বলেন, ‘শুরুর কিছুদিন ঘরে ভালোই সময় কেটেছে। টিভি দেখে, বই পড়ে আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কখন যে চলে গেছে, টেরই পাইনি। তবে এখন অনেকটাই বোরিং লাগছে। করোনার আগে আমি নিয়মিত বেরোতাম। পরিবারের বাজার-সওদা আমিই করতাম। তবে এখন ছেলেই মাঝেমধ্যে বাইরে গিয়ে বাজার করে নিয়ে আসছে। বয়সের কথা চিন্তা করে পরিবারের সবাই আমাকে বাসা থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে। আমিও বেরোচ্ছি না। তবে এখন যেন সময় আর কাটতে চাচ্ছে না। প্রতিদিন টিভি দেখা, বই পড়া আর ভালোও লাগছে না। কবে যে এই বন্দীদশা থেকে আমরা মুক্তি পাব!’

মমতাজ উদ্দিন নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির বাসা নগরের বাগবাড়ি এলাকায়। স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ আর দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে তাঁদের পরিবার। মমতাজ বলেন, ‘ছেলের কড়া নিষেধ আছে বাইরে না বেরোতে। তবে বিকেল বেলা পরিবারের সবাই মিলে বাসার ছাদে একটু হাঁটাচলা করি। সারা দিন ঘরে বসেই অলস সময় কাটাই। আগে পাড়ায় একটি দোকানে বসে আরও কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে আড্ডা দিতাম। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সেই আড্ডা বন্ধ রয়েছে। তবে যাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইল ফোনে কথা হয়। তাঁরাও আমার মতো অলস সময় কাটাচ্ছেন। জীবনে এমন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, সেটা কল্পনাতেও ছিল না। পুরো পরিবেশটাই কেমন যেন হঠাৎ করেই বদলে গেল।’

নগরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রাসবিহারী দাশ নামের আরেক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি জানান, নানা ধরনের বই পড়েই তাঁর সময় কাটছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে হকারেরা পত্রিকা বিলি বন্ধ করে দেওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে পত্রিকার অভাবে তাঁর ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। টিভি দেখে পত্রিকার অভাব কোনোভাবেই তিনি পূরণ করতে পারছেন না বলে জানালেন। রাসবিহারী বলেন, ‘এই সময়টাতে সঠিক তথ্য জানার জন্য পত্রিকা সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকা উচিত। এটা সবার জন্যই মঙ্গল হতো। বিষয়টি হকার ও পত্রিকা সংশ্লিষ্টদের বিবেচনা করা উচিত।’

একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানিয়েছেন, যাঁরা শয্যাশায়ী তাঁদের ঘরে অবস্থান করতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে যাঁরা এখনো হাঁটাচলা করতে পারেন, বাইরে যেতে পারেন, তাঁদেরই ঘরবন্দী জীবনযাপনে সমস্যা হচ্ছে। সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া জানান, তাঁর বাবার বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও রয়েছে। অথচ তিনি প্রতিদিনই নিয়ম করে বিকেল বেলা ঘরের বাইরে বেরোনোর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। কোনোভাবেই তাঁকে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাবার মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরিয়ে তাঁকে নিয়ে বেরোতে হয়। বাসার সামনে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দ্রুতই তাঁরা ফিরে আসেন। সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা মইনুল ইসলাম (৬৫) সিলেট মিররকে বলেন, ‘ঘরে বসে থাকতে থাকতে একগুয়েমি চলে আসে। এরপরও বয়স আর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে বাইরে বেরোই না। ছেলের বউ বাসার বারান্দা ও ছাদে নানা জাতের সবজি, লেবুসহ বেশ কিছু গাছের চারা রোপণ করেছিল। সেসবের পরিচর্যা করেই সময় কাটিয়ে দিই। দ্রুত এই ভোগান্তির অবসান হোক, মনেপ্রাণে এখন এটাই চাইছি।’