নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৯, ২০২০
১০:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২০
১২:২৪ অপরাহ্ন
আরিফুল ইসলাম। পেশায় শিক্ষক। সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির পর তাঁর দৈনন্দিন রুটিন অনেকটাই বদলে গেছে এখন। সেহেরি শেষ করে ভোরে ঘুমাতে যান। বেলা ১১টায় ঘুম থেকে উঠেন। এরপর অনলাইনে কিছু পত্রপত্রিকা পড়েন। ঘরের ভেতরে একটু হাঁটাহাঁটি সেরে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। এরপর স্ত্রী-মেয়েরা চলে যান ইফতারি তৈরিতে। তখন তিনি শুয়ে-বসে মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
ইফতারের আগ পর্যন্ত এটাই যেন এখন আরিফুল ইসলামের দৈনন্দিন রুটিন। আরিফুল বলেন, ‘রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে জীবনযাপনের ধরন একরকম ছিল আর রমজান শুরু হওয়ার পর আরেকরকম। তবে এই দুইরকম জীবনযাপন অন্যসময় কাটাইনি। মূলত করোনাভাইরাসের কারণে দৈনন্দিন রুটিনে মারাত্মক রকমের দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। কেবল আমি নই, আমার পুরো পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই এ হেরফের ঘটেছে। মেয়েদের পড়াশোনা যেমন আগের তুলনায় কম হচ্ছে, তেমনি সকলের অলস সময় বেড়েছে। বিশেষত ঘুমের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে। খবর নিয়ে দেখলাম, আমার পরিচিতজনদের অনেকের মধ্যেই এমন পরিবর্তন হয়েছে। তবে বাসায় এতদিন পড়ে থাকা বইগুলো এখন পড়ছি, এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।’
সিলেট নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৫ জন মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই জানালেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে তাঁদের অবসর সময়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন রুটিনে আকাশ-পাতাল তফাৎ এসেছে। তবে ঘরবন্দী সময়টা যে খুব ভালোভাবে কাটছে, তাও নয়। টিভিতে সম্প্রচারিত সংবাদ ও টক শোর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে করোনার সার্বিক পরিস্থিতির খবর জেনে সবসময় মনমরা হয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে। শান্তি ও নির্বিঘেœ কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ঘরের ভেতর বসে থাকতে থাকতেও ভালো লাগছে না। দ্রুত এ অবস্থার অবসান হোক, এখন এটাই তাঁরা মনেপ্রাণে চাচ্ছেন।
দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজাদ হোসেন নামের এক কাপড়ের ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে ছেলেকে মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে দেখলেই শাসন করতাম। এটা যেন সে না করে, সে উপদেশ দিতাম। এখন ঘরে বসে থাকতে থাকতে আমার কোনো কাজ নেই। এই কয়দিনেই শরীর মোটা হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি, ওজন বেড়েছে। আর হবেই না কেন? ঘরে বসে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে নানা রকমের গেমস খেলছি। এটা দেখে এখন আমার ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা আড়ালে হাসে। কিন্তু কী করব? সময় তো কাটাতে হবে!’ রায়নগর এলাকার গৃহিণী ফাতেমা আক্তার জানান, রমজান শুরু হওয়ার আগে ব্যস্ততা খুব একটা ছিল না। তখন অবসর সময় অফুরন্ত ছিল। কিন্তু এখন রমজান শুরু হওয়ায় দুপুরের পর থেকেই ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। অন্যান্য বছর বাজার থেকে অনেক ইফতারসামগ্রী কিনে আনা হতো। এবার তা হচ্ছে না। ফলে ব্যস্ততা বেড়েছে।
বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকুরিজীবী সুর্নিমল দাশ বলেন, ‘ঘরবন্দী সময় যেন কাটতেই চাইছে না। দিন আর রাত এখন আমার কাছে সমান হয়ে গেছে। ঘুম, খাওয়া আর ইউটিউবে সিনেমা দেখাÑএ তিনটিই আমার এখন মূল কাজ। গত একমাসে কম করে হলেও ৭০টি দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখা হয়ে গেছে। কবে যে এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাব, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। আর কিছুদিন ঘরবন্দী থাকলেও তো পাগলের মতো হয়ে যাব!’ বাদামবাগিচা এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ঘরে বসে থাকতে থাকতে তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো ধরনের কাজ না করায় ক্রমশ আলস্যতা ভর করছে। সারাক্ষণ কেবল ঘুম পায় তাঁর।
শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে মোটামুটি সময়টা ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে। দিনে বই পড়ছি আর মোবাইল ফোনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের খবরাখবর নিচ্ছি। ইফতারি শেষে ঘরেই তারাবিহ নামাজ পড়ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা তো মোটামুটি ভালোই আছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অবস্থা তো ভয়াবহ। সে তুলনায় আমাদের এখানে সংক্রমণ কম হয়েছে। আর কয়েকটা দিন যদি আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে বসে কাটিয়ে দিতে পারি, তাহলে করোনার ভয়াবহতা থেকে আমরা অনেকটাই রক্ষা পাব। যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, এখন এখান থেকে রক্ষা করতে আল্লাহই একমাত্র সহায়।’