কথা রাখেননি বড়লেখার ব্যবসায়ীরা

এ জে লাভলু, বড়লেখা


মে ১৬, ২০২০
০৩:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৬, ২০২০
০৩:৩১ পূর্বাহ্ন



কথা রাখেননি বড়লেখার ব্যবসায়ীরা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় পৌর শহরের হাজীগঞ্জ বাজারে ফার্মেসি, মুদি দোকান ও জরুরি পণ্যের প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন মার্কেটের বেশ কিছু দোকানপাট খোলা হয়। ক্রেতারাও এসব দোকানে ভিড় করছেন। খোদ ব্যবসায়ী নেতাদের দুই-একজনও খুলছেন দোকান।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্ধের সিদ্ধান্তে যারা ছিলেন তারাই আগে দোকান খুলছেন। যার কারণে বিভিন্ন মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান খুলে মালামাল বিক্রি করছেন।

ঈদ উপলক্ষে শর্তসাপেক্ষে ১০ মে থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয় সরকার। তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ঝুঁকি এড়াতে বড়লেখার ব্যবসায়ীরা ১৭ মে পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

গত সোমবার (১১ মে) দুপুরে পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাজীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেন।

তবে এই সিদ্ধান্ত না মেনে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন মার্কেটে দোকান খুলেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। এই দোকানগুলোতে ছিল না ক্রেতাদের জন্য কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। নিজেদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দোকান খোলার ঘটনায় সচেতন মহলে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দোকান খোলার ছবি পোস্ট করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার দুপুরে পৌর শহরের হাবিব মার্কেট, জহির ম্যানশন, নেহার মার্কেট, মধ্যবাজার এলাকার মজনু ভেরাইটিজ, জলি ম্যানশন, এম আলী শপিং কমপ্লেক্স, মস্তকিন আলী ম্যানশন, মজির মার্কেট, পিসি হাইস্কুল মার্কেট, বড় মসজিদ মার্কেট, হাজী মেমোরিয়াল মার্কেট ও নুরজাহান শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে বেশ কিছু দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। মার্কেটগুলোর মূল ফটকও অর্ধেক খোলা। দোকান খোলা থাকায় অনেক ক্রেতাই ভিড় করছেন মার্কেটে। ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা। অনেকে ব্যবহার করছেন না সুরক্ষা সরঞ্জাম।

দোকান খোলার বিষয়ে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। প্রায় দেড় মাস ধরে দোকান বন্ধ থাকায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তার ওপর দোকান কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। অনেক কষ্টে আছি আমরা। তারপরও আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের সিদ্ধান্তে দোকান বন্ধ রাখি। কিন্তু বন্ধের বিষয়ে যারা সিদ্ধান্তের অগ্রভাগে ছিলেন, সেসব ব্যবসায়ীরাই আগে দোকান খুলে গোপনে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন। যার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও তাদের দেখাদেখি দোকান খুলছেন।

এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ বাদশা বলেন, সকলের সিদ্ধান্তে ১৭ মে পর্যন্ত দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। কিছু দোকান খোলার অভিযোগ এসেছে। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখবেন।

এ বিষয়ে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, বড়লেখা পৌর শহর ও সাধারণ মানুষকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সর্বসম্মতিক্রমে দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবায়ী এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে দোকান খুলছেন, তাদের ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। নারী-পুরুষসহ অনেক ক্রেতা এসব দোকানে আসছেন। বড়লেখার সকল পর্যায়ের মানুষকে অনুরোধ করবো করোনাভাইরাস যাতে আর সংক্রমিত না হয় সেজন্য জীবিকা নয়, জীবন রক্ষার লক্ষ্যে আপাতত যেন ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়। ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ, মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখুন। পরিবহন শ্রমিক ভাইদেরও অনুরোধ করব, আপনারা আগের মতো লকডাউন মেনে চলুন।

 

এজে/আরআর