এসএসসিতে নিজের কৃতিত্ব দেখা হলো না জাকারিয়ার

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুন ০১, ২০২০
০৩:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০১, ২০২০
০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন



এসএসসিতে নিজের কৃতিত্ব দেখা হলো না জাকারিয়ার

জাকারিয়া হোসেন

জাকারিয়ার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে ডাক্তার কিংবা পাইলট হবে। একদিন পরিবারের হাল ধরবে। বাবার কষ্ট ঘোচাবে। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়াও করছিল। সে তার বাবাকে জানিয়ে রেখেছিল, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই সে ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হবে। কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না!  

আজ রবিবার (৩১ মে) জাকারিয়ার এসএসসি পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। পরীক্ষায় সে এ গ্রেড (জিপিএ-৪.০৬) পেয়ে পাসও করেছে। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফল আর জানা হলো না তার। কারণ এর আগেই চিরতরে নিভে গেছে তার প্রাণ প্রদীপ। ফলে জাকারিয়ার স্বপ্ন আর কোনোদিন পূরণ হবে না।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজেদের দোকানের পাওনা ৮৫ টাকা চাইতে গিয়ে গত ২১ মে রাতে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া জাকারিয়া হোসেন (১৮) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.০৬ পেয়েছে। সে চলতি বছরের উপজেলার দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এদিকে জাকারিয়ার এমন কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলেও তার পরিবারের কারও মুখে হাসি নেই। হাসির বদলে তাদের চোখে নেমেছে অশ্রু।   

রোববার বিকেলে মুঠোফোনে আলাপকালে জাকারিয়ার বাবা সালাহ উদ্দিন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, পরিবারে ছেলে-মেয়ের মধ্যে জাকরিয়া বড় ছিল। সে লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। জাকারিয়ার স্বপ্ন ছিল সে ভবিষ্যতে ডাক্তার অথবা পাইলট হবে। তার সেই স্বপ্নের কথা প্রায়ই আমাদের বলত। এজন্য সে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করত। পিইসি পরীক্ষাতেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

তিনি বলেন, জাকারিয়া আমাকে বলেছিল এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করলেই ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হবে। আমাদের অভাবের সংসার। এর মধ্যে ছেলেকে কষ্ট করে পড়াচ্ছিলাম। আজ তার রেজাল্ট বের হয়েছে। ছেলে আমার পাস করেছে। কিন্তু সে তো আর ফল জানা হলো না। ভর্তি হওয়া হলো না ভালো কোনো কলেজে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর যে আমার ছেলেকে খুন করেছে তাকে আসামি করে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ তাকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমি আর কিছু চাই না, শুধু আমার ছেলেকে যে হত্যা করেছে আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক কেউ এভাবে খালি করতে না পারে। 

দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুক আহমদ রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, জাকারিয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়েছে। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। মা-বাবা তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তাই পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও কষ্ট করে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করিয়েছিলেন। কিন্তু দোকানের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে তাকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে। আমি জাকারিয়ার হত্যাকরীকে গ্রেপ্তারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

জাকারিয়া হত্যা মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ মোহন দেবনাথ রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, জাকারিয়া হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের সালাহ উদ্দিন বাড়ির পাশের টং দোকানে পান, সিগারেট ও কাঁচামালের ব্যবসা করেন। গত ২১ মে দুপুরে তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী জাকারিয়া হোসেন দোকানদারী করছিল। প সময় প্রতিবেশী তোতা মিয়া বাড়ি থেকে টাকা এনে দিচ্ছেন বলে ৮৫ টাকার মালামাল ক্রয় করেন। কিন্তু পরে তোতা মিয়া পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি। রাত ৮টার দিকে জাকারিয়া হোসেন দোকানের পাওনা টাকা চাইতে তোতা মিয়ার বাড়িতে যায়। তিনি টাকা নেই বলে তাকে বিদায় করার চেষ্টা করেন। এ সময় তোতা মিয়ার ছেলে প্রবাসফেরত আজিম উদ্দিন (৩৫) জাকারিয়ার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি জাকারিয়া হোসেনকে ছুরিকাঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকারিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই ঘাতক আজিম উদ্দিন গা ঢাকা দেন।

এজে/আরআর-০৭