খাসিয়ামারা নদীতে সেতু চান দোয়ারাবাজারের মানুষ

মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুন ১৬, ২০২০
১২:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৬, ২০২০
১২:৫০ পূর্বাহ্ন



খাসিয়ামারা নদীতে সেতু চান দোয়ারাবাজারের মানুষ

খাসিয়ামারা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্যতম একটি পাহাড়ি নদী। ভারতের ওই নদীটি উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ভাঙাপাড়া গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীর উজানে ও ভাটিতে কয়েকটি স্থানে সেতু না থাকায় উপজেলার সুরমা ও লক্ষীপুর এই দুই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ওই নদীর লক্ষীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর-লিয়াকতগঞ্জ বাজার অংশে ও সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর-পশ্চিম টিলাগাঁও এবং টেংরাটিলা-আলীপুর বাজার অংশে সেতু না থাকায় বর্ষায় পারাপারে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। খাসিয়ামারা নদীর কয়েকটি অংশে সেতু নির্মাণের দাবি এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর বাজার অংশে সেতু না থাকায় রশি টেনে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাওরপাড়ের জনসাধারণকে পাহাড়ি নদী খাসিয়ামারা পাড়ি দিতে হয়। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও দোয়ারার হাওর অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। সুরমা ইউনিয়নের হাওরপাড়ের কৃষিনির্ভর ও মৎস্য চাষে বিখ্যাত ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৎস্য খামার, সবজি চাষ ও বোরো ধান আবাদ করে আসছেন। কিন্তু নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চাষী ও মৎস্য খামারিদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। খাসিয়ামারা নদীর টেংরা-আলীপুর বাজারের নিকটবর্তী সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও আজ অবধি এখানে কোনো সেতু নির্মিত হয়নি। যে কারণে উপজেলার সুরমা ও লক্ষীপুর ইউনিয়নের টেংরাটিলা, আলীপুর, আজবপুর, গিরিসনগর, পশ্চিম টিলাগাঁও, নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রাম, সুলতানপুর, বড়কাটা, বৈঠাখাই, হাছনবাহার, এরুয়াখাই, রসরাই, সোনাপুরসহ অন্তত ১৭-২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুর অভাবে দুর্ভোগের অন্ত নেই এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খাসিয়ামারা নদীটি পাহাড়ি হওয়ায় এমনিতেই আতঙ্কে থাকেন দুই তীরের মানুষজন। একটু বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সারাদেশের কোথাও বন্যা না থাকলেও পাহাঢ়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় দুই ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘর ও ফসলি জমি। বর্ষায় নদীতে থাকে প্রচণ্ড স্রোত। এরই মধ্যে ছোট হাতনৌকায় রশি টেনে দুই তীরের মানুষদের পারাপার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। উপজেলা সদর ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের আর কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় রশি টেনে নৌকা পাড়ি যে কত ভোগান্তির, তা ওই অঞ্চলের মানুষই ভালো জানেন।

আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মশিউর রহমান বলেন, 'কৃষিনির্ভর ৮-১০টি গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন করেন। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বিভাগীয় শহর সিলেটসহ সারাদেশে যায় এই এলাকার বিষমুক্ত উন্নত জাতের সবজি ও মাছ। কিন্তু খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর বাজারের নিকটে সেতু না থাকায় যাতায়াত অসুবিধার কারণে একটা সময় পানির দরে বিক্রি করতে হয় এখানকার উৎপাদিত সবজি ও মাছ। তখন কৃষকদের চেয়ে মধ্যস্বত্তভোগীরাই বেশি লাভবান হয়। সেতু নির্মিত হলে জেলা শহর ও বিভাগীয় শহর থেকে সরাসরি এ অঞ্চলে যানবাহন অনায়াসে আসতে পারবে। তখন সঠিক মূল্য পাবেন চাষীরা।'

উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনূর রশীদ বলেন, 'এখানে সেতু দেওয়ার ব্যাপারে ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় বর্তমান এমপি মহোদয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই একটিমাত্র সেতু নির্মিত হলে খাসিয়ামারা নদীর পশ্চিমপাড়ের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। সেতুর ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা আমার জানা নেই। আমিও এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর বাজার থেকে টেংরাটিলার নিকটবর্তী স্থানে দ্রুত সেতু স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।'

 

এইচএইচ/আরআর-১১