জবাই ও বিক্রি হচ্ছে রোগাক্রান্ত পশু, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুন ২২, ২০২০
০৬:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২২, ২০২০
০৬:১৬ অপরাহ্ন



জবাই ও বিক্রি হচ্ছে রোগাক্রান্ত পশু, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে গবাদি পশুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। করোনার এই সময়েও কোনো ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে রোগাক্রান্ত পশু জবাই ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে করোনার এই সময়কালে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় গবাদি পশুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রোগে আক্রান্ত হয়ে কমলগঞ্জেও ছয়টি গরু মারা গেছে। গায়ে গোটা, গলা ফোলাসহ নানাভাবে এ রোগ বিস্তার লাভ করছে। এই সময়ে আক্রান্ত পশু কেউ কেউ স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন। বর্তমানে একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে গবাদি পশুর চর্মরোগ জাতীয় মহামারি দেখা দিয়েছে। এই সময়কালে রোগাক্রান্ত পশু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি তদারকি করা প্রয়োজন বলে স্থানীয় সচেতন মহল দাবি তুলেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছাড়পত্র নিয়ে জবাই করার কথা। তবে এ বিষয়ে কারও কোনো তৎপরতা নেই। ফলে সাধারণ ক্রেতারা মাংস কিনে নিলেও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর, মুন্সীবাজার, আদমপুর ও পতনউষার বাজারে নিয়মিত গরু, মহিষ ও ছাগল জবাই করে বিক্রি করা হয়। তবে কোনো ধরণের ডাক্তারি পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই হাটবাজারে কসাইরা অবাধে বিক্রি করছেন জবাইকৃত পশুর মাংস। পশু জবাইখানায় পশু জবাই করার কথা থাকলেও পৌরসভাসহ হাট-বাজারের সুনির্দিষ্ট জবাইখানা না থাকায় যত্রতত্র পশু জবাই করা হচ্ছে। বাজারে অসুস্থ, নিম্নমানের পশু জবাই করেও বিক্রি করা হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও সহিদুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ভোরে কসাইরা গরু জবাই করে থাকেন। যেখানে-সেখানে পশু জবাই করে বাজারে নিয়ে মাংস বিক্রি করেন। ভোরে শহরের আড়ালে পশু জবাই করলেও রোগ-ব্যাধি আছে কি না তা দেখার কেউ নেই। 

আশরাফ উদ্দিন, কয়ছর মিয়া, কায়েস আহমেদসহ কয়েকজন মাংস ক্রেতা বলেন, বাজারে নিম্নমানের ও অসুস্থ পশু জবাই করে বিক্রি করা হচ্ছে। পশু জবাইয়ের নিয়ম-নীতি কেউ মানতে রাজি নন। অথচ এসব গাবদিপশু নানা জটিল রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। এই সময়ে পরীক্ষা ছাড়া পশু জবাই মোটেও ঠিক নয়।

তারা আরও বলেন, আমরা মরা না কি রোগাক্রান্ত গরু-মহিষের মাংস কিনছি তা বোঝার কোনো উপায় নেই। তবে কসাইরা বলছেন, তারা উন্মুক্ত স্থানে পশু জবাই ও বিক্রি করে থাকেন। অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত কোনো পশু জবাই করে না কি বিক্রি করা হয় না।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, নিয়ম-নীতি মেনে পশু জবাই করার জন্য কসাইদের বলেছি। তাছাড়া বিষয়টি প্রাণীসম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দেখভাল করার কথা।

কমলগঞ্জ উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. দুলাল আহমদ বলেন, পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে স্যানিটেশন ও হাইজেনিং হচ্ছে কি না সে বিষয়টি দেখে থাকি। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হেদায়েতউল্লাহ বলেন, প্রকৃত অর্থে এখানে কোনো স্বীকৃত কসাইখানা নেই। এগুলো পৌরসভা, হেলথ স্যানিটারি ইন্সপেক্টরেরও দেখার কথা। তাছাড়া পশু জবাই কোন নির্দিষ্ট স্থানে হচ্ছে জানলে বা আমাদের জানালে সেখানে লোক রাখতাম।

 

এসডি/আরআর-০৩