দেশে এক বছরেই ৮ সহস্রাধিক নতুন কোটিপতি

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ২৪, ২০২০
১১:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৪, ২০২০
১১:১৮ অপরাহ্ন



দেশে এক বছরেই ৮ সহস্রাধিক নতুন কোটিপতি

দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে এক কোটি টাকা বা এর বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এখন ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। আর গত এক বছরে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে আট হাজার ২৭৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।

এর মধ্যে কোটিপতিদের দখলে থাকা আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের প্রায় ৪৩.৩৯ শতাংশ। তিন মাস আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে কোটিপতির অ্যাকাউন্ট ছিল ৭৯ হাজার ৮৭৭টি। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৯৬২টি।

এছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৫৬৩টি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে আট হাজার ২৭৬টি।

দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা করা যায়। বাস্তবে কোটিপতির সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে শুধু যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোটি টাকার বেশি জমা আছে, সেই সংখ্যা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে অনেকেই আছেন, যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫ হাজার ৯১৯টি। এক বছর আগে ২০১৮ সালে যা ছিল ৫৯ হাজার ২৫৮টি। ফলে গত এক বছরে এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ছয় হাজার ৬৬১টি। এ সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৩টি। ২০১৮ সালে যা ছিল এক হাজার ১৪৮টি।

ফলে ২০১৯ সালে ৫০ কোটি টাকার বেশি তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ১৩৫ জন ব্যক্তি। অন্যদিকে গত এক বছরে ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্টসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৪টি, যা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিল ৩৫৮টি। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর শেষে পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে ৯ হাজার ৪২৬ জন, ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে তিন হাজার ১৮৪ জন, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৪৭২ জন, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ৯৯৭ জন, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৫৮৮ জন, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৪৬ জন এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ৩৮৪ জন আমানতকারী অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে অর্থনীতির আকার ক্রমেই বড় হচ্ছে। প্রতিবছরই বাড়ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়। এতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বেড়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগত মান না বাড়ায় সমাজের একটি শ্রেণির কাছেই বেশি সম্পদ ও অর্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধিও গুণগত মান বাড়ছে না বলেই দেশে এতো পরিমাণে ধনী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর মানে হলো একটি বিশেষ শ্রেণির কাছেই দিন দিন আয় ও সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল এ শ্রেণির মানুষই ভোগ করছে। তিনি বলেন, এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোটিপতিদের তথ্য রয়েছে, ফলে এসব ব্যক্তির আয়ের উৎস অনুসন্ধান করা উচিত। তা না হলে কোটিপতির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এতে দেশে আয় বৈষম্যও কমবে না।

জেএসএস/এনপি-১৭