দুর্নীতিতে ভেঙেছে সড়ক, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


জুন ২৬, ২০২০
০২:০৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৬, ২০২০
০৪:২৭ পূর্বাহ্ন



দুর্নীতিতে ভেঙেছে সড়ক, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ
সুনামগঞ্জের কাঠইর-জয়নগর সড়ক

সংস্কারের মাত্র ১ বছরের মাথায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর-জয়নগরবাজারের ১১ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ভেঙে গেছে। স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না করে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের কিছু কর্মীর দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যাচ্ছেতাই কাজের কারণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে চুক্তির মেয়াদ থাকার পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী ফের সড়কটি সংস্কার করে দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তারা ভাঙা অংশের সংস্কার কাজ করছে না। বরং এখন চুক্তিমূল্যের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছে। চলতি জুনেই তাদের চুক্তিমূল্যের মেয়াদ শেষ হবে। টাকা তুলে নিলে আর রাস্তাটি সংস্কার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মদনপুর-জামালগঞ্জ সড়কের মধ্যে সদর উপজেলার জয়নগর পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে হোসেননগর-জয়নগরবাজার অংশে ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সংস্কার করার জন্য। ২০১৮ সনের শেষদিকে দায়সারা কাজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্টারপাইজ। ওইসময় স্থানীয় যুবকরা ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষে তদারকিতে থাকা সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে যাচ্ছেতাই কাজ করার কয়েকমাসের মধ্যেই ভেঙে যায় সড়কের ওই অংশ। রাস্তাজুড়ে দেখা দেয় বড় বড় গর্ত।

কয়েকমাসের মধ্যেই রাস্তার এমন অবস্থা হলে স্থানীয়রা সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের ঠিকাদারের জমাকৃত চুক্তিমূল্য থেকে সংস্কার কাজ করানোর দাবি জানান। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে সময়ক্ষেপন করে মেয়াদ উত্তীর্ণ দেখিয়ে জমাকৃত টাকা ঠিকাদারের হাতে তুলে দেন। ফলে আর সংস্কার কাজ করা হয়নি।

সম্প্রতি ওই রাস্তায় আরও বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। হোসেননগর থেকে সরদারপুর পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ সুনামগঞ্জ সদরের একটি অংশের মানুষের যাতায়াত চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে এই সড়ক দিয়েই জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতে হয়।

এদিকে একই সড়কের মদনপুর পয়েন্ট থেকে হোসেননগর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অংশে দেড় কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করে জেআর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের এই কাজটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পন্ন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটিও নিম্নমানের কাজের ফলে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সংস্কারের নির্ধারিত সময় থাকলেও রহস্যজনক কারণে ওই প্রতিষ্ঠানেরও জমাকৃত সিকিউরিটি মানির টাকা থেকে ভাঙা অংশ মেরামত করা হচ্ছে না। এই জুনেই তাদের মেয়াদ শেষ হবে। তাই তারা ভাঙা অংশ চুক্তি অনুযায়ী সংস্কার না করেই টাকা তুলে নেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

 

তিনটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে সরকার নিয়মিত বরাদ্দ দিলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে টেকসই কাজ হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। যার ফলে সংস্কার কাজ শুরুর পরই সড়কটি আবারও ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

মোহনপুর ইউনিয়নের বর্মাউত্তর গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা আবু তালিব আল মুরাদ বলেন, গত কয়েকবছর ধরে দেখছি সরকার আমাদের কাঠইর-জয়নগর সড়কে নিয়মিতই বরাদ্দ দিচ্ছে। কাজও বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু একদিকে কাজ হয়, আরেকদিকে ভেঙে যায়। চুক্তির মেয়াদ থাকলেও চুক্তিমূল্য থেকে সংস্কার না করিয়ে নিরাপদে ঠিকাদারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

মোহনপুর গ্রামের সাজু তালুকদার বলেন, ঠিকাদার যখন এই সড়কে কাজ শুরু করেন, তখন আমরা যুবসমাজ সরকারি নিয়ম মেনে কাজ বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা যাচ্ছেতাই কাজ করায় একবছরের মাথায় রাস্তা ভেঙে গেছে। ঠিকাদার আর অফিস মিলেই এই সড়কের কাজে সবসময় অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে। যে কারণে আমাদের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না।

অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেআর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক রিপন বলেন, এই সড়কে কাজ করতে গিয়ে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও মেয়াদ থাকায় আমরা গর্তগুলো আবারও ভরাট করে দিয়েছি।

সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কের ভিত্তি মজবুত না থাকায় সংস্কার করা হলেও ভেঙে যাচ্ছে। তাই এটিকে বড় প্রকল্পে নিয়ে সংস্কারের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া চুক্তির মেয়াদ থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে যাওয়া অংশ সংস্কার করে দেওয়ার জন্যও পত্র দিয়েছি। 

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

 

এসএস/আরআর-১১