বন্যায় ভেসে গেছে আড়াই সহস্রাধিক পুকুরের মাছ

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


জুলাই ০৪, ২০২০
১২:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২০
০১:৩১ পূর্বাহ্ন



বন্যায় ভেসে গেছে আড়াই সহস্রাধিক পুকুরের মাছ
সুনামগঞ্জের খামারিদের মাথায় হাত

ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুরের মুসলিম উদ্দিন ১০ একর জমির ৯টি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। গত ২৭ জুন পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর বন্যায় তার ইব্রাহিমপুর মডার্ণ এগ্রো ফার্মটির প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।

শুধু মুসলিম উদ্দিন নন, সুনামগঞ্জের প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড়-মাঝারি মৎস্য খামারিকে পথে বসিয়ে দিয়েছে সর্বগ্রাসী বন্যা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি প্রণোদনা দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানের হিসেবে ২১ কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার তথ্য এলেও পূর্ণাঙ্গ তথ্যে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার খামারিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে অন্যান্য উপজেলার খামারিরাও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পর্যন্ত জেলায় ২ হাজার ৮শ ৪৬টি পুকুরের মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুরের অবকাঠামো। এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ ঢলের পানি এখন নিম্নাঞ্চলে চাপ তৈরি করছে।

সূত্রমতে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য খামারিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এই উপজেলায় ১ হাজার ২শ ১৮টি পুকুরের ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তাছাড়া দোয়রাবাজার উপজেলায় ২৯৩টি পুকুরের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৪৫০টি পুকুরের ৩ কোটি ৫২ লাখ, জামালগঞ্জের ১১১টি পুকুরের ৭৭ লাখ, ধর্মপাশা উপজেলার ৩৪২টি পুকুরের ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ছাতকের ২১০টি পুকুরের ৬৫ লাখ, দিরাইয়ে ২৬টি পুকুরের ৪০ লাখ, শাল্লার ৬টি পুকুরের ২৫ লাখ, জগন্নাথপুরের ৩০টি পুকুরের ২৬ লাখ, তাহিরপুরে ৭০টি পুকুরের ৬৪ লাখ এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৯০টি পুকুরের ৫৯ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। খামারিরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ মাছই বিক্রির উপযুক্ত ছিল।

খামারিরা জানান, ২০০৪ সালের পর এবারই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্যখাত। খামারিদের প্রায় সবাই জমি ভাড়া নিয়ে, ব্যংক ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। এখন বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ার বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। সরকারি সহায়তা না পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের রহম আলী, জিয়াউর রহমান, জমির আলী, আব্দুর রশিদ, তৈয়বুর রহমান, মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সাদকপুর গ্রামের খামারি জুনেদ আহমদ, আমিনুল ইসলাম, পৌর শহরের কালা মিয়াসহ একাধিক খামারি জানান, এই বন্যায় তাদের পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। মাছগুলো বিক্রির উপযোগী ছিল। কিন্তু বন্যায় তাদের পুকুর ভেসে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। ঋণগ্রস্ত এই ব্যবসায়ীরা এখন পথে বসার মতো অবস্থায় রয়েছেন।

সাদকপুর গ্রামের খামারি জুনেদ আহমদ বলেন, 'আমরা মাগুর মাছের খামার করেছিলাম। গতবছরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবারও সব মাছ বেরিয়ে গেছে। আমরা ঋণ করে খামারটি শুরু করেছিলাম। এই বন্যা আমাদের পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে আমাদের পালিয়ে যেতে হবে।'

মোহাম্মদপুর মডার্ণ এগ্রো খামারের পরিচালক মুসলিম উদ্দিন বলেন, '১ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমরা প্রকল্পের মধ্যেমে খামারটি করেছিলাম। গত শনিবার (২৭ জুন) সকালে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় আমাদের ৯টি পুকুরের ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব, কিভাবে বাঁচব এ নিয়ে টেনশনে আছি। সরকার আমাদের প্রণোদনা না দিলে পথে বসতে হবে।'

সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'সুনামগঞ্জের মৎস্য খামারিরা বন্যায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রতিদিনই আমরা ক্ষতির খবর পাচ্ছি। প্রায় ৩ হাজার পুকুর বন্যায় ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা আমরা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করার চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা দাবি করেছেন আমাদের কাছ থেকে। তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।'

 

এএফ/০৪