'ভুতুড়ে' বিদ্যুৎ বিলে বিপাকে কমলগঞ্জের গ্রাহকরা

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুলাই ০৪, ২০২০
০৯:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২০
০৯:৩২ অপরাহ্ন



'ভুতুড়ে' বিদ্যুৎ বিলে বিপাকে কমলগঞ্জের গ্রাহকরা

সংগৃহীত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের 'ভুতুড়ে' বিল নিয়ে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন বাড়ি বাড়ি না গিয়ে মিটারের রিডিং না দেখে অফিসে বসেই তৈরি করছেন মনগড়া বিল। গত দুইমাস ধরে বিদ্যুৎ বিল মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।

কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিমাসে 'ভুতুড়ে' বিদ্যুৎ বিল বানালেও উপজেলায় লোডশেডিং, যান্ত্রিকত্রুটিসহ নানা অব্যবস্থাপনা দূর করতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের অধীনস্থ গ্রাহকরা 'ভুতুড়ে' বিদ্যুৎ বিলে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন। দ্বিগুণ, তিনগুণ বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে তিনমাসের বিল সংযুক্ত করা হয়েছে। গ্রামের সহজ-সরল কৃষক, দিনমজুররা এসব বিল নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে বিভিন্ন স্থানের গ্রাহকরা 'ভুতুড়ে' বিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক সঙ্গে তিনমাসের যুক্ত ও বড় অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে বিলম্ব মাশুল ছাড়া সময় বৃদ্ধির দাবি করেছেন গ্রাহকরা।

জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের অধীনস্থ গ্রাহকদের মে মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে তিনমাসের যুক্ত বিলে ইচ্ছেমতো রিডিং লিখে তৈরি করা হয়েছে 'ভুতুড়ে' বিল। বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জে অভাব-অনটনের সময়কালে এসব বিল নিয়ে ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ সৃষ্টি হয়েছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ তুলেছেন।

কমলগঞ্জের বিদ্যুৎ গ্রাহক কামাল উদ্দীন বলেন, 'আমার বিদ্যুৎ বিলে বর্তমান মিটার রিডিং দেখানো হয়েছে ১৯০০ আর পূর্ববর্তী ১৭৯০। পরে মিটার চেক করে দেখি বর্তমান মিটার রিডিং ১৬১৫। এটি জুন ২০২০ মাসের হিসাব।'

উপজেলার শ্রীনাথপুরের জমির উদ্দীন চৌধুরীর রাইস মিলে ব্যবহৃত ১১৫ ইউনিটের বিল আসে ৮ দশমিক ৫০ টাকা হিসাবে। সেখানে ১৬৩৫ টাকার একটি 'ভুতুড়ে' বিল দেখানো হয়েছে।

পতনঊষারের আব্দুল হান্নানের হিসাব নম্বর ১১১/৫৫০০। তিনি বলেন, 'প্রতিমাসে তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা হারে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছি। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০২০ সালের তিনমাসের এককালীন ১০৬০ টাকা বিল পরিশোধ করেছি। অথচ শুধু মে মাসেই বিল এসেছে ১২৪৮ টাকা।'

কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপার গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, 'আগে আমার মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৭৫ টাকা থেকে ৮০ আসত। মে মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে তিনমাস যুক্ত করে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১৮৯৮ টাকা।'

এভাবে আরও বেশ কিছু গ্রাহক বিদ্যুৎ বিলে আকস্মিককভাবে দ্বিগুণ, তিনগুণ টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তোয়াবুর রহমান, সামসুদ্দীন আহমদ, আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ বিলের নামে গ্রাহকদের ধোকা দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। করোনাভাইরাসের অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে দুই মাসে দেড় থেকে দ্বিগুণ টাকা বেশি নিচ্ছে। এমন 'ভুতুড়ে' বিল এর আগে কখনও আসেনি। আমাদের মতো সহজ, সরল ও নিম্নআয়ের লোকজন এগুলো নিয়ে অফিসে আসা-যাওয়া করতে যাতায়াত খরচ ও একদিনের আয় সবই নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বাড়তি বিল দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে আয়-রোজগার না থাকায় এমনিতেই সঙ্কটে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তার উপর এক সঙ্গে তিনমাসের বিদ্যুৎ বিল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিল পরিশোধের এই সময় আরও বর্ধিত করা প্রয়োজন।

বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলেন, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে প্রতিমাসে দশ টাকা হারে মিটার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পরও মাসে মাসে আজীবন মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এসব বিষয় সঠিকভাবে তদারকি করারও কেউ নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কারণ জানতে চেয়ে প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের মোবাইলে ফোন করলেও কেউ কল রিসিভ করেন না।

এসব অভিযোগ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ জোনালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই গড় বিল করা হয়েছে। তবে যারা অফিসে বিল নিয়ে আসছেন, তাদের বিল সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য যাদের সমস্যা রয়েছে, তাদের পরবর্তী মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। অতিরিক্ত বিলের সমস্যা যাদের হয়েছে, তারা অফিসে এসে বিল সংশোধন করার সুযোগ পাবেন।'

আরসি-০২