কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
জুলাই ০৫, ২০২০
০২:১২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২০
০২:১২ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালিঞ্জি পুঞ্জিতে বসবাসকারী আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বিদ্যুতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
আজ শনিবার (৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় কালিঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির সম্মুখে প্রায় ২ শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেন।
পুঞ্জির হেডম্যান রিতেংগেন খেরিয়ামের সভাপত্বিতে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান উয়াংবর সুটিং, সাবেক হেডম্যান নাইট খেরিয়াম, সামায়ের খেরিয়াম প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ঘোষণা করা হলেও আমরা খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তাই অতি দ্রুত আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।
জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় ঘোষণা করলেও মূলত কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পাশের একটি গ্রাম বিদ্যুতের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। নতুন করে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পাশের গ্রামে বিদ্যুতায়নের দাবিতে শনিবার দুপুরে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির প্রবেশ পথে পুঞ্জি ও গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলেন, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করেছে। অথচ এই দু’টি গ্রাম এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫টি পরিবার দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পুঞ্জির নারী-পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে টিলার উপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত হলে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার উপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেত।
এ ব্যাপারে পুঞ্জির হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম বলেন, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বন বিভাগ অহেতুক কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনে বাধা দিয়েছে। কমলগঞ্জকে সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেও কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন গ্রাম বিদ্যুতায়নের বাইরে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আবারও বন বিভাগ জরিপ কাজ করে। এ জরিপ কাজ শেষে আজ শনিবার সকাল থেকে আবারও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কালেঞ্জি পুঞ্জিতে নতুন করে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করে। আর তখনও বন বিভাগের লোকজন এ কাজে বাধা সৃষ্টি করে। আর তার প্রতিবাদে দুপুরে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫টি পরিবারের সদস্য ও পাশের গ্রামের ৫০টি পরিবারের সদস্যসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও তার পাশের গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসতে হবে। গত মার্চ মাসে বন বিভাগ সর্বশেষ সরেজমিনে তদন্ত করেছে। আজ শনিবার বিদ্যুৎ বিভাগ আবার কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পাশের গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বন বিভাগ বাধা সৃষ্টি করে। যা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। বনাঞ্চলে অন্যান্য খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও কেন বন বিভাগ কালেঞ্জি পুঞ্জিতে বাধা সৃষ্টি করছে তা আমি বুঝতে পারছি না।
আদমপুর বনবিট কর্মকর্তা শ্যামল রায় জানান, কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য ইতোপূর্বে বন বিভাগ একটি জরিপ সম্পন্ন করলেও বিদ্যুতায়ন কাজ শুরু করা সম্পর্কে তার কাছে বন বিভাগের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই তিনি আপাতত কাজটি বন্ধ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী আশেকুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কমলগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হলেও কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও একটি গ্রাম বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। বন বিভাগের বাধার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও কালেঞ্জি গ্রামকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজন খাসিয়া পুঞ্জি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিও এনে রাখে। শুধুমাত্র বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামকে এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যায়নি। এ নিয়ে তিন মাস আগে বন বিভাগ জরুরিভাবে জরিপও করেছে। তাহলে কেন তারা এখন বাধা প্রত্যাহার করছে না তা বোঝা যাচ্ছে না। শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আজ শনিবার থেকে আবারও ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বন বিভাগের লোকজন বাধা দেন।
এসডি/আরআর-০৯