বন্যায় ভেঙে গেছে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের সংযোগ সড়ক

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুলাই ০৮, ২০২০
১১:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৯, ২০২০
০৬:৫৯ অপরাহ্ন



বন্যায় ভেঙে গেছে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের সংযোগ সড়ক

সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সংযোজিত সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশ এভাবেই ভেঙে গেছে। ফলে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ।

বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের অন্যতম সংযোগ সড়ক। জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলা সদরের সংযোজিত সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশ ও সেলিমগঞ্জ-মান্নানঘাট অংশের প্রায় ২০০ মিটারেরও বেশি রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এতে করে সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুই অংশে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৩ কোটি টাকার বেশি। ভেঙে যাওয়া অংশে ফেরি বসিয়ে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হলেও বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। এছাড়া সেলিমগঞ্জ-গজারিয়া রাস্তার বিভিন্ন অংশে প্রায় ৮শ মিটার এবং সাচনা-মমিনপুর ও সাচনা-রামনগর রাস্তার অনেক অংশ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা এলজিইডি অফিস।

এদিকে, সাচনা-সুনামগঞ্জ সংযোগ সড়কের অধিকাংশ জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত ছাড়াও পাশের বালি-পাথর সরে গিয়ে মূল মাটি বের হয়ে এসেছে। এতে ধীরে ধীরে আরও ভাঙনের সৃষ্টি হবে এবং দিন যত গড়াবে যাত্রী চলাচলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

অপরদিকে, সাচনা-সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ মূল সড়ক ছাড়াও উপজেলার অভ্যন্তরে থাকা গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাটও কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে উপজেলার ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কে ৫-৬ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না করলে চলাচলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে- এমন আশঙ্কা করছেন সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীসাধারণ থেকে শুরু করে সচেতন মানুষ।

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশে প্রায় ১৫০ মিটার ও জামালগঞ্জ-গজারিয়া সড়কের সেলিমগঞ্জ-মান্নানঘাট অংশের মাঝখানে ৫০ মিটারেরও বেশি রাস্তা পুরোপুরিভাবে ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই ২০০ মিটার রাস্তার ভেঙে যাওয়া অংশে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩ কোটি টাকারও উপরে। এছাড়া সেলিমগঞ্জ থেকে গজারিয়া রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে আরও প্রায় ৮শ মিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সংযোগ সড়কের পুরাতন আরসিসি রোড অনেক আগেই ভেঙে গেছে। এখন যা আছে সব নতুন। এ নতুন রাস্তাও বন্যার পানিতে ভাঙছে বলে জানিয়েছে উপজেলা এলজিইডি।

উজ্জ্বলপুরের ভাঙা সড়ক সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা অংশ দিয়ে দ্রুতগতিতে পানি নির্গত হচ্ছে। বন্যায় ভেসে যাওয়া রাস্তাটুকু দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে পূর্বে কোনো সড়ক ছিল। সড়কের বিশাল অংশ ভেঙে যাওয়ায় নৌকা দিয়ে এপার-ওপারে যাতায়াত করছেন মানুষ। সুনামগঞ্জমুখী যাত্রীরা টমটম কিংবা লেগুনা দিয়ে উজ্জ্বলপুরের ভাঙা অংশে গিয়ে নামছেন। পরে সেখানে ফেরির অপেক্ষায় অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। এতে করে সাধারণ মানুষ যে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেটা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ থেকে দ্রুত উত্তরণ চান পথচারী ও যাত্রীসাধারণ।

বন্যায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ভীমখালী ইউনিয়নের উজ্জ্বলপুর অংশের সড়কে ভোগান্তি নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল ওয়াকিব বলেন, 'সড়ক ভেঙে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ফেরির জন্য দাঁড়িয়ে থেকে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে কেউই তাদের গন্তব্যে যেতে পারছেন না। রাস্তা ভাঙার পর মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রথম দুইদিন আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ফেরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারপরও যেন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না মানুষ। তাই দ্রুত রাস্তা সংস্কার করা প্রয়োজন।'

জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া সেলিমগঞ্জ-মান্নানঘাট রাস্তা নিয়ে কাশিপুর গ্রামের মো. তোতা মিয়া বলেন, 'বন্যার পানিতে রাস্তাটা ভাইঙা যাওয়ায় আমরা খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। টমটম-সিএনজি (অটোরিকশা) এখন চলে না। ফেরি দিয়া পার হইতে কমপক্ষে আধাঘন্টা সময় লাগে। যাইতে-আইতে বেশ সময় নষ্ট হয়। মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে যেন রাস্তাটা তাড়াতাড়ি ঠিক কইরা দেওয়া হয়।'

সম্প্রতি সাচনা বাজার-সুনামগঞ্জ সড়কে চলতে গিয়ে সাচনা গ্রামের নিহার দাস বলেন, 'বন্যা পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জে যেতে রাস্তার যে অবস্থা দেখলাম তাতে দিন দিন অবস্থা আরও করুণ হবে। সড়কের প্রায় জায়গাতেই গর্ত হয়ে পাথর বের হওয়ার পাশাপাশি রাস্তার ধারে বালু-পাথর সরে গাছের শিকড় পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। পূর্বে সড়কের ভাঙা দূর করতে কোনোরকম পোছা দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই পানি উঠামাত্রই সহজে ভেঙে যাচ্ছে রাস্তা। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। নইলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না।'

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজু বলেন, 'বন্যায় উজ্জ্বলপুরের যে রাস্তাটা ভেঙেছে সেটা জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে যাওয়ার প্রধান সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা পরিষদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় ১৫ দিনের জন্য টেন্ডার দিয়েছে। তাতে নির্দিষ্ট হারে একটা ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু করোনা ও বন্যায় বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করাটা আসলে ঠিক নয়। তাই আমরা এটা বাদ দিয়ে চলাচলে ভাড়া ফ্রি করে দেওয়ার চিন্তা করছি।'

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, 'জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে দ্রুত সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন। এ জন্য এলজিইডি হেড কোয়ার্টারের ডিজাইন সেকশনকে যথাযথ ডিজাইনের মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যা আমাদের উপজেলা এলজিইডি অফিসের পক্ষে সম্ভব নয়। পানি সরে গেলে হয়তো উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা এলজিইডি'র পক্ষ থেকে প্রাথমিক চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।'

 

বিআর/আরআর-০৪