ছাতকে নৌপথে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

মাহবুব আলম, ছাতক


জুলাই ১১, ২০২০
১২:৪৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১১, ২০২০
০২:৫৩ পূর্বাহ্ন



ছাতকে নৌপথে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

সুনামগঞ্জের ছাতকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌপথের চাঁদাবাজরা। একাধিকবার সংঘর্ষ, মামলা, গ্রেপ্তার, প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও পণ্যবাহী নৌযান থেকে চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সমিতির নামে চলছে এই চাঁদা আদায়। প্রতিদিনই এ নৌপথের ৬ থেকে ৮টি স্থান থেকে ৪-৫ লাখ টাকার মতো চাঁদাবাজি হচ্ছে পাথর, বালু ও চুনাপাথরবাহী বার্জ, কার্গো ও নৌকা থেকে।

চাঁদাবাজিতে যুবলীগ ও ছাত্রদলের  একাধিক নেতাকর্মী জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের অভিযানে মাঝে-মধ্যে স্পট থেকে দুই-একজনকে আটক করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান মূলহোতারা। আটককৃতরা মূলত কমিশনে অথবা বেতনভুক্ত হিসেবে চাঁদা আদায় করে থাকেন। পর্দার আড়ালের রাঘব-বোয়ালরা আবার এদের জামিন করানোর জন্য শুরু করেন তদবির। এর মধ্যেই কমিশন দেওয়ার শর্তে নদীতে নতুন চাঁদাবাজ নিয়োগ করেন তারা। ফলে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব চাঁদাবাজি।

জানা যায়, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সুরমা, চেলা এবং পিয়াইন নদীপথে বালু, পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা নিতে আসে বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের নৌযান। বর্ষা মৌসুমে এ ধরণের যান চলাচল আরও বেড়ে যায়। এসব নৌযান ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন কোয়ারি থেকে পাথর সংগ্রহ করে। এছাড়া ভারত থেকে চুনাপাথর, বোল্ডার, সিঙেল পাথর আমদানি করেও ছাতক নৌবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাম্পিং করা হয়। এসব স্থানের ব্যবসায়ীদের ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী নৌপথের ইছাকলস, কালারুকা ইউনিয়নের বোবরাপুর, দিগলবন্দ, চেলা নদীর মুখ, থানাঘাট, চাঁদনীঘাট, পেপারমিল ঘাট, নোয়ারাইঘাট, বারকাপন মুক্তিরগাঁও, বউলার মুখ, জামুরায়সহ কয়েকটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়। যাদের চাঁদা আদায়ের বৈধতা রয়েছে, তারাও অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছেন টোল আদায়ের নামে। প্রতিদিন শ'খানেক ছোট-বড় নৌযানকে ঘাটে ঘাটে গড়ে চার হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার চাঁদাবাজদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতবছরের ১৪ মে রাতে ছাতক শহরের নদীতে চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে গুলি লেগে মারা যান সাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এরপর পুলিশ তৎপর হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে চাঁদাবাজি। পুলিশি তৎপরতা স্তিমিত হয়ে এলে আবার তা শুরু হয়। 

চলতি সপ্তাহেই নৌযান থেকে চাঁদা আদায়কালে অভিযান চালিয়ে কালারুকা ইউনিয়নের দিঘলবন্দ এলাকা থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ চারজনকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। এরপর ছাতক নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিগতদিনে উপজেলার প্রায় ২৮টি পয়েন্টে চাঁদাবাজি হতো। বর্তমানে তা ৬-৭টিতে নেমে এসেছে। 

এ প্রসঙ্গে ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কবির জানান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্সে আছে। সরাসরি জড়িত এবং পর্দার আড়ালের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

 

এমএ/আরআর-০৫