মঙ্গলপ্রভাতে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা

আহমেদ নূর


জুলাই ১০, ২০২০
০৮:৪৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১২, ২০২০
০৪:৪৭ অপরাহ্ন



মঙ্গলপ্রভাতে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা

সময়টা বড়ই অচেনা। কেউ ভালো নেই। না দেশের মানুষ, না বাইরের মানুষ। হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। শান্তি নেই, কিন্তু দুশ্চিন্তা আর আতঙ্ক আছে। চিরচেনা সবকিছুই কেমন যেন অগোছালো, অচেনা। আলোর মধ্যে অন্ধকার। এমনই এক বৈরী সময় অতিক্রান্ত করছি আমরা। অপেক্ষা শুধু এক চিলতে আলোর জন্য, শুদ্ধতার জন্য, সুন্দরের জন্য।

এমনই এক কঠিন সময়ে দৈনিক সিলেট মিরর তার পথচলার দু-বছর পূর্ণ করেছে। আজ ১০ জুলাই সিলেট মিরর-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত চার মাস ধরে এক বন্ধ্যা সময় অতিক্রম করছি আমরা। কোভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাবে আমাদের পথচলাও থমকে থেকেছে কয়েক মাস। নানা বাস্তবতায় এই সময়ে পাঠকদের হাতে আমরা মুদ্রিত সংবাদপত্র তুলে দিতে পারিনি। তবে সিলেট মিরর-এর অনলাইন সংস্করণের মাধ্যমে পাঠকদের সঙ্গে সবসময় আমরা ছিলাম। মুদ্রিত সংবাদপত্রে পাঠকরা যেভাবে আস্থা রেখেছিলেন, অনলাইন সংস্করণেও তাঁরা আমাদের পাশে ছিলেন। বিপুলসংখ্যক পাঠক আমাদের সংবাদ অনলাইনে পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। চলতি মাসের শুরু থেকে আমরা আবার মুদ্রিত সংস্করণ চালু করেছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পাঠকরা আমাদের সঙ্গে আছেন-এটাও আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। 

মহামারি করোনা গোটা বিশ্বকে এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংকট দেখা দিয়েছে অথবা অচিরেই দেখা দেবে। বলা হচ্ছে, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে নতুন করে পথচলা শুরু হবে।  বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে জানি না। তবে লক্ষণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমগুলোর জন্য করোনাকালীন এবং করোনা পরবর্তী সংকট মোকাবেলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার চার মাস না-পেরোতেই সংবাদপত্রগুলো নানা সংকটে পড়েছে। নতুন করে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা এই মুহূর্তে অনুমান করাও সম্ভব না। কারণ গতকালই আমরা লক্ষ করলাম ‘মিডিয়া মোঘল’ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের ডেইলি মিরর গ্রুপ তাদের ১২ শতাংশ কর্মী ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, করোনাকালীন সময়ে তাদের আয় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। কর্মী ছাটাই ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্নভাবে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় সংকোচন করবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত অনেক পত্রিকায় একই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এই দাহকালের শেষ কোথায় তা কেউ বলতে পারছে না! 

সিলেট মিরর-এর প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা বেশ সাড়ম্বরেই পালন করেছিলাম। সিলেট থেকে একটি মানসম্পন্ন ও সমৃদ্ধ ঈদ সংখ্যা, শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ, গুণীজনদের সম্মাননা প্রদানসহ বেশ কিছু সামাজিক উদ্যোগও আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার ছোবলে এসব উদ্যোগ হোঁচট খেয়েছে। গত ঈদে আমরা ঘরবন্দি ছিলাম। সবকিছু ছিল অবরুদ্ধ। অনেক প্রথিতযশা লেখকের লেখা সংগ্রহ করেও আমরা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘটা করে উদযাপনের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি করাও সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা আশায় বুক বাঁধি, কোনো একদিন আমরা আবার আগের মতো আমাদের বর্ষপূর্তির মুহূর্ত বর্ণিল উচ্ছ্বাসে উদযাপন করব। আমরা বিশ্বাস করি, এই দাহকাল কাটবেই। আবার সবকিছু জেগে উঠবে আগের মতো। মানুষ নিজের মতো নতুন করে আবার সাজাবে পৃথিবী। কারণ বিশ্বটা তো মানুষের জন্যই। 

প্রিয় পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী, আপনাদের অকৃত্রিম সৌহার্দ্য আমাদের দায়বোধ বাড়িয়ে দেয়। আমরা জানি, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন, আমরা তা অতিক্রম করতে পারব। সে আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। কারণ একটাই-আমাদের অগ্রযাত্রায় আপনারাই সবচেয়ে বড় সঙ্গী। তাই আমরা বিশ্বাস করি অন্ধকার যত গাঢ়ই হোক, আলোর মশাল আমরা জ্বালবই।

সবাই ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন। 

 

- সম্পাদক, সিলেট মিরর