দোয়ারাবাজারে হাওরের আফালে ভাঙছে সড়ক

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুলাই ২১, ২০২০
১০:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২১, ২০২০
১০:০৩ অপরাহ্ন



দোয়ারাবাজারে হাওরের আফালে ভাঙছে সড়ক

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় হাওরের আফালে ভাঙছে সড়ক। টানা তৃতীয় দফা বন্যায় ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। নতুন করে ভাঙছে বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। অব্যাহত ভয়াবহ বন্যার পানিতে খামারের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গিয়ে ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্যচাষীরা। ভারী বর্ষণ ও বন্যায় কাবু হয়ে পড়েছেন এই জনপদের মানুষ। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার হাওরে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বড় বড় ঢেউয়ে (আফাল) সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।

গত দুইদিন ধরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওরে অব্যাহত আফালে শ্রীপুর-বড়কাপন সড়কের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়কজুড়ে স্থানে স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে। উত্তাল হাওরের ঢেউয়ে ইতোমধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ হাওরবেষ্টিত সড়কটির কোনো কোনো স্থানে নীচের প্রায় সম্পূর্ণ মাটি সরে গেছে।  

স্থানীয়রা মনে করছেন, বর্ষায় উত্তাল হাওরের আফাল অব্যাহত থাকলে তা হাওরপাড়ের মানুষের বসতভিটায় হানা দিতে পারে। এতে ভেঙে চুরমার করে সব ভাসিয়ে নেবে বানের পানি। হাওরবেষ্টিত এলাকার মানুষ আফাল থেক ঘরবাড়ি রক্ষার যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছেন এখন।

আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার থেকে তৃতীয় দফায় বন্যার পানি বসতঘরে প্রবেশ করায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে রয়েছেন মানুষ। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের মানুষজন গৃহপালিত পশু, হাঁস, মোরগ নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। বসতভিটায় পানি ওঠায় স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নিয়েও সংকটে রয়েছেন তারা। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দফায় দফায় বন্যায় পানিবন্দি মানুষেরা পানিবাহিত নানা রোগবালাইয়ে ভুগছেন।

পলিরচর গ্রামের বাসিন্দা পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, 'হাওরের ঢেউয়ে পলিরচর, কৃষ্ণনগর, রাধানগ, জলসী, চাঁনপুর, হরিপদনগর, গোপিনগর, উষাইরগাঁওসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।'

পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেছেন, 'দফায় দফায় বন্যায় মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। মানুষ কীভাবে বাঁচবে এই চিন্তায় এখন অস্থির। করোনাকাল এবং দুর্যোগ-দুর্ভোগের দিনগুলোতে প্রায় সবার হাত খালি। এ অবস্থায় বাড়িঘর রক্ষা করবে কীভাবে?'

উপজেলার দেখার হাওরের আফসরনগর গ্রামের সমাজকর্মী ফয়সল আহমদ ও রেদওয়ানুর রহমান বলেন, 'দেখার হাওরের আফালে ইতোমধ্যে শ্রীপুর-বড়কাপন সড়ক বিধ্বস্ত হতে শুরু করেছে। এই হাওরের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে আছে। আফালে অনেকের ঘরবাড়ি ভাঙতে শুরু করেছ। গত দুইদিন ধরে হাওরে উথালপাতাল ঢেউ অব্যাহত আছে। বাড়ছে বানের পানিও।'   

পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, 'তৃতীয় দফা বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাওরের আফালে জনগুরুত্বপূর্ণ শ্রীপুর-বড়কাপন সড়কটির স্থানে স্থানে নিচের মাটি সরে গিয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত দুই দফা বন্যায়ও ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে।'

 

এইচএইচ/আরআর-১০