সিলেটে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার ভুয়া কার্ড বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ২৩, ২০২০
১২:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৩, ২০২০
০২:৪৬ পূর্বাহ্ন



সিলেটে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার ভুয়া কার্ড বাতিল

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে সিলেটে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভুয়া কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এসব কার্ডের বিপরীতে সরকারী সহায়তা দীর্ঘদিন দরে আত্মসাৎ করা হচ্ছিল। তাই এগুলো বাতিল করে নতুন নাম যুক্ত করা হয়েছে। 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় সিলেট জেলায় ৩০ হাজার ৭৪৩ ব্যক্তির নামে কার্ড ছিল। এই কার্ডের বিপরীতে মূলত ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। খাদ্য অধিদপ্তর এই সহায়তা দিয়ে থাকে। প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-নভেম্বর এই পাঁচ মাসে দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

করোনা মহামারিতে যখন সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে যায় তখন এই সহায়তা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু এগুলো বিতরণ করতে গিয়ে সরকারকে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়। কারণ সারাদেশ থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। অনেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এসব চাল আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই অপরাধে একশ'রও বেশি চেয়ারম্যান-মেম্বার বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকের নামে দুদকে মামলাও হয়েছে। এই অবস্থায় টনক নড়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশে কী পরিমাণ ভুয়া কার্ড রয়েছে তা খুঁজতে তদন্ত শুরু হয়। কাজটি করছে খাদ্য অধিদপ্তর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা এই তালিকাটি হালনাগাদ করছে।

জানা গেছে, সিলেট জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ৪ হাজার ৫শ ভুয়া কার্ডের সন্ধান পেয়েছে। যেখানে পাওয়া গেছে ভিজিডি (ভারনারেবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট), বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ অন্য সরকারি সহতায়তা পাওয়া ব্যাক্তির নাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়স্বজন, মৃত ব্যক্তি, স্বচ্ছল পরিবার, গ্রামে বসবাস করে না ব্যাক্তির নাম। এসব কার্ডের বিপরীতে সরকারী সহায়তা দীর্ঘদিন দরে আত্মসাৎ করা হচ্ছিল।

খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, অনিয়ম বন্ধে খাদ্য মন্ত্রণালয় কিউআরকোডসহ ডিজিটাল কার্ড তৈরির কাজ শুরু করেছে। যেখানে ভোটার আইডির তথ্য দিয়ে কার্ডটি করা হবে। এই কার্ডের হলে কার্ডধারী ব্যতিত অন্য কেউ সুবিধা নিতে পারবে না। আগামি সেপ্টেম্বরে আবার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করা হবে। তখন পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ডিজিটাল কার্ড ব্যবহারের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাস চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, সিলেটে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভুয়া কার্ড বাতিল করা হয়েছে। ভিজিডি বা অন্য সরকারি সহায়তা পাওয়া ব্যক্তি, স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের নামে ভুয়া কার্ড ছিলো। এগুলো বাতিল করে নতুন নাম যুক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুয়া কার্ড ছিলো।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, 'সারাদেশ থেকে যখন অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে তখনই এই তদন্ত শুরু হয়। এটা এখনো চলমান রয়েছে।'  

জানতে চাইলে সিলেটের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৬ লাখ কার্ড পেয়েছি। যেগুলো আসলে কিছু সচ্ছল পরিবার, মৃত ব্যক্তি, কিছু নাম পরিচয়হীন ব্যক্তি, গ্রামে থাকে না এমন কিছু ব্যক্তির নামে ছিল। যেগুলো আমরা বাতিল করেছি এবং সত্যিকার অর্থেই দরিদ্র এমন মানুষের নামে এগুলো দেওয়া হচ্ছে।'

নাজমানারা খানুম আরও বলেন, 'আমরা ডিজিটাল কার্ডে যাবো, কাজও শুরু হয়েছে। এর জন্য অবশ্য একটু সময়ের দরকার আছে। এই কার্ড থাকলে কেউ জালিয়াতি করার সুযোগ পাবে না।' 

এনসি/বিএ-২২