মাধবপুর প্রতিনিধি
জুলাই ২৩, ২০২০
১১:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২৩, ২০২০
১১:১৯ পূর্বাহ্ন
হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের ঘটনার ১০৯ দিন পর তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভিকটিমের মা। গত সোমবার (২০ জুলাই) হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করা হয়। পরে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য মাধবপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে লক্ষ্মীপুর গ্রামের পাশের একটি নির্জন এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন চুক্তিভিত্তিক প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করা ওই নারী। এরপর তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো মামলা হয়নি।
ঘটনায় ১০৯ দিন পর গত সোমবার ভিকটিমের মা আদালতে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মহিবুর রহমান পিপলু (২৬), বাঘাসুরা গ্রামের সনজব আলীর ছেলে ফয়সল মিয়া (২৫) ও সমুজ আলীর ছেলে সুরুজ আলী (৩২)। পরের দু'জনকে ধর্ষণে সহায়তাকারী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মামলায় এ তিনজনকে আসামি করা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। কারণ ভিকটিমের মা ধর্ষণের ঘটনার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে তিনজনের নাম বলেছিলেন, ৩ মাস পর সেই তিন আসামির কেউই মামলার আসামি নন। ধর্ষণের পর গণমাধ্যম, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের ভিকটিমের মা যে তিনজনের কথা বলেছিলেন তারা হলেন- মাধবপুর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের সরমুজ আলীর ছেলে সুরুজ আলী (৩৫), লক্ষীপুর গ্রামের হিরাজ মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (৩০) এবং একই গ্রামের কামরুল মিয়া (২৫)।
আদালতে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি পিপলুর পরিবারের দাবি, তাদের পরিবারের সম্মান সমাজে হীন করার উদ্দেশে উপজেলার কাউড়া গ্রামের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন তালুকদার নিজের লোকজন দিয়ে ভিকটিমের পরিবারকে ম্যানেজ করে এই মামলায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে নতুন মামলা দায়ের করেছেন।
পিপলুর পরিবারের লোকজন বলছেন, মহিবুর রহমান পিপলু হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক ও তার পিতা এখলাছুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তারা বাঘাসুরা ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তারা হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকায় বসবাস করছেন। ঘটনার সঙ্গে পিপলু কোনোভাবেই যুক্ত নন। ইউপি সদস্য নিজের স্বার্থে ভিকটিমের মা আর ধর্ষণ মামলাটিকে ব্যবহার করছেন। এজন্য তারা মামলাটির সঠিক তদন্ত দাবি করেন।
এদিকে ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন তালুকদার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। পরে এ প্রতিবেদক ইউপি সদস্য হিসেবে ধর্ষণ মামলা আপসের চেষ্টা করার এখতিয়ার তার আছে কি না প্রশ্ন করলে তিনি এখতিয়ার নেই উল্লেখ করে বিষয়টি শুনেছেন বলে ফোন কেটে কেন।
বাঘাসুরা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর পরই ভিকটিমের পিতা এরশাদ আলী আমাকে বিষয়টি অবগত করেন। ওইসময় তিনি আমার কাছে ধর্ষণকারীদের নামও প্রকাশ করেন। তখন ছাত্রলীগ নেতা পিপলুর নাম তিনি একবারও উচ্চারণ করেননি। এছাড়াও পিপলু একজন ভালো ছেলে। সে বর্তমানে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবি’তে অধ্যয়নরত।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন জানান, কোর্টের আদেশ এখনও থানায় এসে পৌঁছায়নি। আদেশ পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএম/আরআর-০৪