তৃতীয় দফা বন্যায় নাকাল তাহিরপুরবাসী

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


জুলাই ২৩, ২০২০
০৮:৫৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৩, ২০২০
০৮:৫৭ অপরাহ্ন



তৃতীয় দফা বন্যায় নাকাল তাহিরপুরবাসী

বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুই দফায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানুষ। এরই মাঝে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। হাওরের আফালের (ঢেউয়ের) কবলে ভাঙছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি হারাচ্ছে অনেক পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বন্যা পরিস্থিতি অতীতের সকল ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে। 

দফায় দফায় বন্যার কারণে নাকাল বানভাসিরা এখন সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্যায় গৃহবন্দি উপজেলার অর্ধশতাধিকের অধিক গ্রামের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অপ্রতুল ত্রাণে খাদ্য সংকটে ভুগছেন এ সকল বানভাসি লোকজন। আর অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে যাদুকাটাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডুবছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট। পানির স্রোতে অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও ছোট ছোট কালভার্ট ভেঙে নানামুখী ভোগান্তির তৈরি হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৭টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একই অবস্থা উপজেলার সঙ্গে জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও।

দুইদফা বন্যায় যাদুকাটা নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের বাঁধ নদীভাঙনের কবলে ভেসে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছিল। এ আশঙ্কা এখন আরও বেড়েছে। কখন না জানি বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে যায়- এমন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন যাদুকাটা নদী তীরবর্তী গ্রামের লোকজন। এমন আশঙ্কার কথা জানান যাদুকাটা নদী তীরবর্তী গড়কাটি গ্রামের বাসিন্দা সুজিত রায়।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখে যায়, বানভাসিরা অধির আগ্রহে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। গ্রামের সামনে নৌকা বা স্পিডবোট ভিড়লেই লোকজন ছুটে আসছেন ত্রাণ পাওয়ার আশায়। ছিলানী তাহিরপুর, লামাগাঁও ও মল্লিকপুর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়নি এখনও। এখন আবারও নতুন করে বন্যায় পতিত হয়ে আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তাও পাচ্ছেন না। গ্রামবাসী আরও জানান, এ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সকল ক্ষয়ক্ষতিকে ছাড়িয়ে যাবে।

শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খসরুল আলম খসরু সিলেট মিররকে বলেন, 'আগেরকার বন্যায় কয়েকদিন পানি থেকে সরে গিয়েছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আভাস দিচ্ছে। হাওরের আফালের (ঢেউয়ের) তোড়ে হাওরপাড়ের অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারাচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে।'

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, 'বানভাসিদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। আজ (গতকাল বুধবার) প্রতিটি ইউনিয়নে বন্যাকবলিতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।'

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় তাহিরপুর উপজেলায় ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় তাহিরপুরে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এএইচ/আরআর-০৯