বন্যায় বিপর্যস্ত জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


জুলাই ২৫, ২০২০
০৭:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৫, ২০২০
০৯:০৭ অপরাহ্ন



বন্যায় বিপর্যস্ত জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা

চলতি বর্ষায় টানা তৃতীয় দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় সাম্প্রতিক টানা তিন দফা বন্যায় জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক, ভবেরবাজার-নয়াবন্দর কাঠালখাই-গোয়ালাবাজার সড়ক, শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়ক, ইড়কছই-চিলাউড়া সড়ক, তেলোকোনা-গলাখাই সড়ক, রানীগঞ্জ-হলিকোনা-স্বজনশ্রী সড়ক, হলিমপুর-করিমপুর সড়ক, জগন্নাথপুর-হবিবপুর মাঝপাড়া সড়ক, প্রভাকরপুর-নন্দিরগাঁও সড়ক, শাহারপাড়া বাজার-শ্রীরামসী বাজার ভায়া পীরের বাজার সড়ক, কেশবপুর-রসুলগঞ্জ বাজার ভায়া এরালিয়া সড়ক, শ্রীরামসী-মিয়ারবাজার সড়ক, লুদুরপুর-সৈয়দপুর সড়ক ও জগন্নাথপুর-খাদ্য গুদাম সড়কসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রায় সবক’টি সড়কে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে সংস্কারহীন জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন, গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এদিকে রানীগঞ্জের দক্ষিণাংশে রানীগঞ্জ-রৌয়াইল সড়কটি কুশিয়ারা নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে। বন্যার পানির চাপে ভেঙে গেছে পাটলী ইউনিয়নের লামা রসুলগঞ্জ সড়কটি। ফলে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় যুবক আবু জিলানী জানান, বন্যার পানির স্রোতে সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রবল স্রোতের মধ্যেও স্থানীয়রা বাশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছেন।

জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শেরপুর এলাকার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন, 'মইয়ার হাওরের ঢেউ আর বন্যার পানিতে ইকড়ছই-চিলাউড়া সড়কের কয়েকটি স্থানে ধসে ধসে পড়ছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন প্রতিরোধে মেরামতের কাজ করলেও সড়কটি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে উপজেলা সদরের সঙ্গে চিলাউড়া ইউনিয়নবাসীসহ পৌর এলাকার একাংশের জনসাধারণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।'

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের নেতা রোমানুল হক রুমেন বলেন, 'তিন দফা বন্যায় জগন্নাথপুর উপজেলার সকল সড়ক বিপর্যস্ত। অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নৌকাই এখন যান চলাচলের একমাত্র ভরসা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লাখো মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।'

জগন্নাথপুরের পরিবহন নেতা নিজামুল করিম বলেন, 'বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে সিলেটে বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহর সুনামগঞ্জের সঙ্গে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর যোগাযোগের প্রধান দুই সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আক্তারপাড়া এলাকায় বিকল্প সংযোগ সড়কের একাংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে এই সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সংস্কারহীন জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কটিও বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়কজুড়ে বড় বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ এবং বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।'

কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হাসিম বলেন, 'তিন দফা বন্যায় ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত করতে হয় ইউনিয়নবাসীকে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনসাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।'

হাওরবেষ্টিত উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশ মিয়া বলেন, 'আমার ইউনিয়নে বন্যায় যাতায়াত ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকজন যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।'

জগন্নাথপুর উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) গোলাম সারোয়ার বলেন, 'দ্বিতীয় দফা বন্যায় জগন্নাথপুরের ১৫টি সড়কের ১১.১৬০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যেই তৃতীয় দফা বন্যায় জগন্নাথপুরের বিভিন্ন সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করছি।'

 

এএ/আরআর-০৪