হাওরপাড়ে বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঈদের আনন্দ

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুলাই ৩০, ২০২০
০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ৩০, ২০২০
০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন



হাওরপাড়ে বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঈদের আনন্দ

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরপাড়ের জনজীবন ঘিরে এখনও থই থই করছে বন্যার পানি। বিপন্ন এই পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে আসন্ন ঈদুল আজহার আনন্দ। বন্যার কারণে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবের আমেজ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। আনন্দের বদলে ভোগান্তির ঘোলা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে হাওরপাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

বন্যায় কর্মহীন অভুক্ত মানুষেরা এখনও ত্রাণের খোঁজে পথ চেয়ে বসে আছেন। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়া মানুষের একটা অংশ আশ্রয়কেন্দ্রে ও অপর অংশ পানিবন্দি বাড়িতে থেকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। বানভাসী এসব মানুষের জন্য ঈদের আনন্দ উদযাপনের চেয়ে জীবন বাঁচানোই এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কথায় বন্যার পানিতে যবুথবু তাদের ঈদ আনন্দ। পাগনা হাওরপাড়ের বন্যাকবলিত লোকালয় ঘুরে এমন বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

পাগনা হাওরপাড়স্থ ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গ্রামের চারপাশে বন্যার পানি ঢেউ খেলছে। বানের পানিতে অধিকাংশ বাড়িঘর অনিরাপদ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বাড়িঘর থেকে এখনও পানি সরেনি। যাদের বাড়িঘর একটু উঁচু, তাদের বাড়ি থেকে কোনোরকমে পানি নেমে গেলেও বাড়ি ও ঘরের কানায় কানায় পানি লেগে আছে। স্যাঁতস্যাঁতে এসব বাড়িঘর বাসিন্দাদের দুর্ভোগের জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। অন্যদিকে যাদের বাড়িঘরে এখনও পানি আছে, তারা কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন, কেউ বা এই পানির মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন। এমন অসহনীয় বাস্তবতার মুখোমুখী উপজেলার সবচেয়ে বড় দুই হাওর হালি ও পাগনাপাড়ের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। এ পরিস্থিতিতে হাওরপাড়ের এসব মানুষ ঈদ আনন্দ থেকে যারপনাই বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

ফেনারবাঁক ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের জয়ধর মিয়া বলেন, 'মনের অবস্থা খুব খারাপ। এখনও স্কুলে আছি। এই কাশিপুর স্কুলে প্রায় ২৫টা পরিবার আছে। বাড়ি ছাইড়া এইভাবে কি ঈদ করা যায়? আর কষ্টের মধ্যে থাকলে কি কোনো কিছু ভালো লাগে? বার বার পানি আইয়া আমরারে ঈদ আনন্দের বদলে মারাত্মক কষ্টের মধ্যে ফালাইয়া দিছে। এইবার আমরার ঈদ-টিদ হইত না।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধারাবাহিক এই বন্যায় ভালো নেই গোটা উপজেলাবাসী। বন্যায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। প্রাণঘাতী করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই তিন দফা বন্যায় মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন। বর্তমান বন্যা বিপর্যয়ে নাকাল হয়ে পড়েছেন পুরো উপজেলার মানুষ। করোনা ও বন্যা দুই দুর্যোগে কর্ম হারিয়ে অধিকাংশ মানুষ এখন প্রায় গৃহবন্দি।

উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতিতে এসেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার অন্যতম উৎসব ঈদুল আজহা। এ উৎসবে অনেকেই বঞ্চিত হবেন ঈদ আনন্দ থেকে। উপর্যুপরি বন্যা কেড়ে নিয়েছে তাদের ঈদ আনন্দ। উপজেলার উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো কোরবানি ঈদে নিজেদের সম্পৃক্ত করলেও ঈদবঞ্চিত থাকবে বানভাসি অসংখ্য পরিবার।

জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের হারুনূর রশিদ বলেন, 'এইবার আমরার ঈদ নাই। বন্যায় ভাসাইয়া লইয়া গেছে সব। রুজি-রোজগার নাই, বড় কষ্টের মধ্যে আছি আমরা। বাড়ি-ঘরে পানি আর ফেক (কাদা) লাইগ্যা আছে। এখন ঈদ করার মতো পরিস্থিতি নাই আমাদের।'

বেহেলী ইউনিয়নের বেহেলী আলীপুর গ্রামের মো. আলম মিয়া বলেন, 'করোনা শেষ না হতেই এসেছে বন্যা। এখনও অনেকের ঘরবাড়িতে পানি। প্রায় পরিবারই বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের জীবন। এ অবস্থায় ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। এবারের ঈদ আনন্দ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।'

সাচনা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, 'যারা দিন আনে দিন খায় তাদের ঘরে ঈদ নেই। সামর্থবান মানুষেরা বাজার-হাট করতাছে। তবে বেচাবিক্রি ভালো না। কারণ আমাদের এখানে নিম্নবিত্তের সংখ্যাই বেশি। তারা করোনা আর বন্যায় কাজকাম হারিয়ে বড় বিপদের মধ্যে আছে। তাই ঈদের বাজার একেবারে দুর্বল।'

 

বিআর/আরআর-০৮