এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে জামালগঞ্জের ৪ শতাধিক পরিবার

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


আগস্ট ০৬, ২০২০
০৯:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৬, ২০২০
০৯:১০ অপরাহ্ন



এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে জামালগঞ্জের ৪ শতাধিক পরিবার

জামালগঞ্জ সরকারি কলেজের আশ্রয়কেন্দ্র।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে চার শতাধিক পরিবারের ঈদ কেটেছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। ঈদুল আজহার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেওয়া এসব পরিবারের কয়েক হাজার মানুষসহ বন্যাকবলিত অসংখ্য পরিবারের লোকজন। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেলে শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে বানভাসি মানুষের একটি অংশ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেন। প্রায় মাসখানেক ধরে এখন পর্যন্ত তারা অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে বসবাস করছেন। দুর্গত জীবনে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা চলে আসায় মহিমান্বিত এই ঈদ আনন্দে শরিক হতে পারেননি তারা।

পবিত্র ঈদ চলাকালীন সময়ে বাড়ি ছেড়ে অভাব-অনটনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে। পানি চলে গেলেও বন্যার ক্ষত রেখে যাওয়া বাড়িঘর মেরামতসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হাওরপাড়ের অসংখ্য পরিবার ও বন্যাশ্রিত মানুষজন। বন্যাকবলিত কোনো পরিবারেই ছিল না ঈদের আনন্দ। তিন দফা বন্যায় ভিটেচ্যুত হওয়া অনেকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের জবানিতে কেবল কষ্ট আর অস্বস্তির কথাই উঠে এসেছে। বন্যায় ভোগান্তির শিকার পরিবারগুলোর মাঝে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যে ত্রাণ সহযোগিতা করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া জামালগঞ্জ সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, এখনও প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার আছে সেখানে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অনেকে গরু-বাছুর নিয়ে আপন আশ্রয়ে চলে গেছেন। কলেজ ভবনের দোতলা-তিনতলাসহ নিচতলার টিনশেড কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের বন্যাকবলিতরা। টিনশেড ভবনের লম্বা বারান্দা ও পুকুরপাড়ে বাঁধা আছে অনেকের গরু-বাছুর। বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে গেলে বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন ও গরু-বাছুর নিয়েই এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বসতভিটা থেকে পানি সরে গেলেও বন্যার ক্ষত এখনও সেরে উঠেনি বিধায় বাড়িতে যেতে পারছেন না উপজেলার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা ৪০৬টি পরিবার। বিপদে পড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা এসব মানুষ পালন করতে পারেননি এবারকার ঈদুল আজহা। কোনো আনন্দ ছিল না ওই পরিবারগুলোতে। বাড়িছাড়া হওয়ার কষ্ট আর অভাব-অনটনে তাদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কলেজে আশ্রিত বানভাসি মানুষ।

জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দুই বোন সদ্য এসএসসি পাশ করা তানিয়া বেগম ও ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তানজিলা বেগম বলে, 'জন্মের পর এবারই প্রথম ঈদের সময়ে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে। রান্না করার মতো চুলা নেই যেখানে, সেখানে ঈদ কিভাবে হবে? বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে এখনও এই কলেজেই আছি। বসতঘরে এখনও কাদাপানি লেগে আছে। গরু-বাছুর নিয়ে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি প্রায় মাসখানেক হয়ে গেছে। শুধু ঈদ এসেছে এটাই জানি। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারিনি বলে খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু কিছু করার নেই।'

একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তেলিয়া লামাপাড়া গ্রামের কিশোর দিনার আহমদ বলে, 'আমরা বন্যার লাগি কলেজে আইয়া জায়গা লইছি। আমরার টেকা-পয়সা নাই। ঈদের বাজার করতাম পারছি না, ঈদও হইছে না। আমরার এইখানো ঈদ খালি আইছে আর গেছে। ঈদের কোনো আনন্দই আমরা পাইছি না।'

জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাফিজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা আছিয়া খাতুন বলেন, 'প্রায় ২০-২২ দিন ধইরা এইখানে আছি। বন্যা আমরারে এইখানো নিয়া আইছে। যার কারণে আমরা ঈদ করতে পারছি না। কোনোরকমে খাইয়া-দাইয়া বাঁইচ্যা আছি। সাহায্য-সহযোগিতা যা পাইছি তা দিয়া জীবন চলে না।'

ফেনারবাঁক ইউনিয়নের আমানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা হীরেন্দ্র বর্মণ জানান, প্রায় একমাস ধরে স্কুলে আছেন তারা। এখানে ১৭টি পরিবার ছিল। ৩টি পরিবার চলে গেছে। এখনও ১৪টি পরিবার আছে। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় তাদের এই দুর্গতি। ঘর থেকে পানি সরে গেলেও এখনও বসবাস করার উপযোগী হয়নি।

ফেনারবাঁক ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত গুলেনূর বিবি জানিয়েছেন, তার বাড়িতে এখনও পানি লেগে আছে। যার জন্য তারা বাড়িতে যেতে পারছেন না। বাড়িছাড়া হওয়ার কষ্ট নিয়ে কোনোরকমে ঈদ কেটেছে তাদের। এবারের ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না। বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, 'আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছেন তারা আমাদের মেহমান। তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ঈদের আগ মুহূর্তে তাদের প্রত্যেককে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বানভাসিদের ভোগান্তি দূর করতে প্রয়োজনে ত্রাণ তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে।'

 

বিআর/আরআর-০৯