নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ০৭, ২০২০
০৭:৪০ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ০৭, ২০২০
০৭:৪০ অপরাহ্ন
সিলেট নগরের তালতলার গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আর দুবছর পরেই পূর্ণ হয়ে যাবে দেড় যুগ। হামলার ক্ষত নিয়ে যারা জীবন অতিবাহিত করছেন বিচারের জন্য তাদের অপেক্ষা এখনও শেষ হয়নি।
২০০৪ সালের আজকের (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভা শেষে বের হওয়ার সময় গুলশান সেন্টারের সামনে গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী নিহত হন। স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন ২০ জন। হামলার কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি, তৎকালীন মেয়র সদ্যপ্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এই হামালয় আহত অনেকে এখনও শরীরে স্প্লিন্টার ও ক্ষত নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন।
হামলার পরদিন সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও ১৬ বছরেও মামলা দুটি নিস্পত্তি হয়নি।
জানা গেছে, হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন ও মুফতি আব্দুল হান্নানের সহায়তায় কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট পাকিস্তান থেকে গোলাবারুদ ও গ্রেনেড বাংলাদেশে নিয়ে আসে। সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের কাছে দেওয়া হয় ৪টি গ্রেনেড। গুলশান সেন্টারে পাকিস্তান থেকে আনা গ্রেনেড দিয়েই হামলা করে জঙ্গিরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গি হুমায়ুন কবির হিমু ও ফখরুল ইসলাম ফাহিম গ্রেনেড হামলা চালায়।
২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর গুলশান সেন্টারে হামলার ব্যাপারে জঙ্গি বিপুলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট নুরে আলম সিদ্দিকী। জবানবন্দিতে বিপুল জানান, ঘটনার দিন হামলার পুরো পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন সম্পর্কে মুফতি হান্নানকে অবগত করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হিমুর কাছে থাকা দুইটি গ্রেনেডের একটি আনা হয় গুলশান সেন্টারের জন্যে। হিমু ও ফাহিম গ্রেনেডসহ সেখানে যায়। গুলশান সেন্টারের উল্টোদিকের মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে তারা। মাগরিবের নামাজের পর গুলশানের উদ্দেশে রওয়ানা হয় বিপুল। জঙ্গী বিপুল নির্দেশ দেয় সুযোগ পাওয়া মাত্রই হামলা করার। কিন্তু সামান্য পরই হিমু জানায়, মেয়র কামরান তো চলে গেছেন। আমি তার কাছে দাঁড়ানো থাকায় হামলা করা সম্ভব হয়নি। বিপুল জানতে চায় আর কোন কোন নেতা আছে জানাও। হিমু বলে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ অন্য নেতারা আছে। এ কথা শোনার পর পরই বিপুল হিমুকে বলে ‘থ্র’। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গিরা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরক মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছেন। মামলার ৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখনও সবার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৫ সালের ৭ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্যে ৩ জঙ্গির অন্য মামলায় ফাঁসি হয়েছে, ২ জন পতালক ও বর্তমানে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজা, মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মফিজ ওরফে অভি ওরফে মহিব উল্লাহ ও আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট কারাগারে আটক রয়েছে। অন্যদিকে হত্যা মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারধীন রয়েছে। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর নওশাদ আহমেদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই মামলা শেষ করার চেষ্টা করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গুলশান সেন্টারে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পর ১২ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে সিলেট আসেন। তাদের অভিযোগ, এই ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের উপর দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। হামলার পর আওয়ামী লীগ নেতা নুনু মিয়া, তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াসুর রহমান, বিধান কুমার সাহা, রণজিৎ সরকারসহ কয়েকজনকে আটকও করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট মিররকে বলেন, ‘খালেদা-নিজামী সরকার পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর জঙ্গীদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গিরা আমাদের কাফনের কাপড় দিয়ে হুমকিও দিয়েছিল।’ তিনি জানান, ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলাও অনেক দূর এগিয়ে গেছে।’
এনসি/এনপি-০২