ট্রেনের টিকেট কেনায় ভোগান্তি

শায়েস্তাগঞ্জ সংবাদদাতা


আগস্ট ০৭, ২০২০
০৬:৩০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৭, ২০২০
০৬:৩০ অপরাহ্ন



ট্রেনের টিকেট কেনায় ভোগান্তি

বাংলাদেশে যাতায়াতের সবচেয়ে নিরাপদ বাহন ট্রেন। কিন্তু ট্রেনের টিকেট পেতে ভোগান্তির শেষ নেই। তবে ইন্টারনেটে টিকেট বিক্রি শুরুর পর ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে। কিন্তু গত ঈদের মতো এবারও আগাম টিকেট বিক্রির অ্যাপের সার্ভার ডাউন হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, সার্ভারের যে অবস্থা তা অব্যাহত থাকলে মানুষ অনলাইনে টিকেট কেনার আগ্রহই হারিয়ে ফেলবে। 

এবার ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের শিকার হয়েছেন অনেকে। তাই কেউ কেউ নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন। মূলতঃ কর্মস্থলে ফেরার পথে যানজট ও অন্যান্য ভোগান্তি কমানোর জন্যই তারা যথাসময়ে কর্মস্থলে ফেরেননি। এখন তারা কর্মস্থলে ফিরছেন। ফিরতি যাত্রায় যারা ট্রেন ভ্রমণকে বেছে নিয়েছেন তারা পড়ছেন বেকায়দায়। 

টিকেট প্রত্যাশী ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী জানান, আজ শুক্রবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকেই রেলের অ্যাপ ‘রেলসেবা’ কাজ করছে না। ঈদে ট্রেনের টিকেট বিক্রির একদিন আগে থেকেই অ্যাপে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। যদিও বলা হয়েছিল, এবার একসঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন। 

গত ঈদে অ্যাপ ব্যবহারে চরম ভোগান্তি আর অব্যব্যস্থাপনার অভিযোগ ছিল রেলওয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সিএনএসবিডি) বিরুদ্ধে। সিএনএসবিডি ২০০৭ সাল থেকে রেলের টিকেটিং পদ্ধতি পরিচালনা করছে। অনলাইন ও অ্যাপের কাজও তারা করছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবার ই-টিকেটিং সিস্টেমের অবস্থার উন্নতি হবে।

আজ সকালে ইয়াসির আরাফাত নামের এক যাত্রী জানান, সকাল ৯টার পর থেকে তিনি এই অ্যাপের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ করছেন। আরেকজন বলেছেন, একঘণ্টা চেষ্টা করে অবশেষে টিকেট পেয়েছেন। অ্যাপ ঠিকঠাক কাজ না করায় এই ভোগান্তি। আরেকজন ই-সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকেট কাটতে গিয়ে দেখেন সাইটের সার্ভার ডাউন। 

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিএনএসবিডি’র সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ। এরপর একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেলের আইটি সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।  তাদের তৈরি করা অ্যাপে গত ঈদুল ফিতরে ৯৫ ভাগ যাত্রী টিকেট কাটতে গিয়ে জটিলতার মুখে পড়েন। এ তথ্য তারা নিজেরাই প্রকাশ করেন। এছাড়া বছরের পর বছর ঈদের সময়ে সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা তো আছেই।

আড়াই মাস পর একই চিত্র ঈদুল আজহার টিকেট বিক্রিতেও। বিক্রি শুরুর আগের দিনেই অ্যাপে লগইন সমস্যা ও ওয়েবসাইটে সার্ভার ডাউন দেখানো শুরু হয়। গতবার অ্যাপ নিয়ে অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন রেলসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখন যাত্রীরা টিকেটের জন্য সরাসরি স্টেশনের যেতে আগ্রহী নন। তাই ক্রেতারা ঝুঁকেছেন অনলাইনে। তারা কম্পিউটার-ইন্টারনেটের দোকানগুলোতে গিয়ে টিকেট কাটছেন। এই সুযোগে শায়েস্তাগঞ্জের দোকানীরা টিকেটের মূল্য বেশি নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ টাকাও নিচ্ছেন। ২১৫ টাকার টিকেটের জন্য ৫০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮০০-৯০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে।

সকাল ৬টায় রেল সেবা অ্যাপ থেকে টিকেট কাটতে হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ছাড়া কেউ টিকেট কাটতে পারেন না। এই সুযোগে কম্পিউটারের দোকানীরা টিকেট কেটে দিগুন দামে বিক্রি করেন। আবার অনেক যাত্রী টিকেট ছাড়াই ভ্রমণ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার পলাশ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাউন্টারে কোনো টিকেট বিক্রি হয় না। এখন সবাই ঘরে বসেই ট্রেনের টিকেট কাটেন। সবজায়গাই রেলওয়ে স্টেশনের পাশে কম্পিউটারের দোকান আছে। তারাই এখন ব্ল্যাকার। তারা টিকিটের দাম বেশি নিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

অনলাইনে টিকেট কেনায় ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলতঃ সকালে সার্ভারে কিছু সমস্যা হয়। কারণ এই সময় হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে টিকেট টাকার চেষ্টা করেন। সকাল ছাড়া অন্য সময়ে সার্ভারে সমস্যা থাকে না।’

রেলওেয়ের নিজস্ব সার্ভার স্টেশন স্থাপনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজস্ব সার্ভার হলে এরকমটি আর হবে না।’

এসএইচআর/এনপি-০৭