পর্যটকদের পদচারণায় মুখর বাঁশতলা-হকনগর

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


আগস্ট ০৮, ২০২০
০১:১১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৮, ২০২০
০২:৩৬ পূর্বাহ্ন



পর্যটকদের পদচারণায় মুখর বাঁশতলা-হকনগর

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের উপত্যকা বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকা। ভারতের মেঘালয়-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে দিনভর চলছে তরুণদের হৈ-হুল্লোড়। চারদিকে আনন্দ বিনোদনে মেতে উঠেছেন সব বয়সের মানুষ। ছবি তোলা আর সেলফিবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আগক পর্যটনপ্রেমীরা।

এবার করোনাকালীন ক্রান্তিলগ্নেও দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এই এলাকায় ঘুরতে এসেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষজন। দীর্ঘ কর্ম ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে প্রতিবছর ঈদ ও ছুটির দিনগুলোতে এখানে ছুটে আসেন সহস্রাধিক পর্যটক। পর্যটন এলাকায় রেস্টুরেন্ট স্বল্পতা, বিশ্রামের ভালো আবাসন সুবিধা, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে ভোগান্তির অন্ত নেই আগন্তুকদের। দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা পর্যটকদের পোহাতে হয় নানা সমস্যা। চলাচলের রাস্তাগুলো চরম বাজে হওয়ায় আগন্তকদের অস্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে হয়।

তারপরও উপজেলার  সীমান্তবর্তী  বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ, জুমগাঁও আদিবাসী পাহাড়, মৌলা নদীর স্লুইসগেট দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পর্যটন এলাকাগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন সব বয়সের মানুষজন। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সব বয়সের  লোকজনের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্যতম নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকা। উত্তরের খাসিয়া ও মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কালের সাক্ষী সৌন্দর্যমন্ডিত শহীদ মিনার। মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টরের সেক্টর হেড কোয়ার্টার ছিল এ স্থানটি। দুইদিকে ভারতের সুউচ্চ কালো পাহাড়, কাঁটাতারের বেড়া, সমতল ভূমিতে ছোট-বড় পাহাড়ি নদ-নালা, আকাঁবাঁকা রাস্তা, সবুজ গাছপালায় অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এই হকনগর ও আশপাশের এলাকা। একটু অদূরে পাহাড় থেকে নেমে আসা মৌলা নদীর উপর নির্মিত স্লুইসগেটের নীচে পানির স্রোতে সাঁতার কাটা আর ভেসে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। এটি যেন এক পাহাড়ি ঝর্ণা। দেখার মতো উপভোগ্য একটি স্থান। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এখানে জমে থাকছে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা।

শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকার আড়াই কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত জুমগাঁও আদিবাসী পাহাড়। বাংলাদেশের সীমানায় এ পাহাড়ে গারোদের বসবাস। সীমান্তের ওই এলাকায় খাসিয়া, গারো, বাঙালিসহ বহুভাষী মানুষজনের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র বাড়তি আনন্দের যোগান দেয় আগক পর্যটকদের।

তবে পর্যটকদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সড়কের এমন বেহাল দশায় তাদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। বাংলাবাজার-ব্রিটিশ সড়ক ও ব্রিটিশ থেকে নোয়ারাই সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভাঙা সড়কে গাড়ি নিয়ে পর্যটন এলাকায় যাওয়া অসম্ভব। রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য। 

ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, ঈদের ছুটিতে জেলা শহর থেকে পরিবার নিয়ে বাঁশতলা পর্যটন এলাকায় এসেছিলাম। কিন্ত রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় এত সুন্দর জায়গা দেখতে এসে অসুখী হয়ে ফিরতে হচ্ছে। এছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান ও আশপাশে খাবারের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। বিশুদ্ধ পানীয় জলের নেই কোনো ব্যবস্থা। শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকার আশপাশ থেকে পাথর ও বালি উত্তোলন করায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। 

 

এইচএইচ/আরআর-০১