রাজু হত্যার দুই বছর আজ, বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক


আগস্ট ১১, ২০২০
০১:৩৯ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২০
০১:৩৯ অপরাহ্ন



রাজু হত্যার দুই বছর আজ, বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদক ফয়জুল হক রাজু হত্যার ২ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট নগরের কুমারপাড়ায় ছাত্রদলের অভ্যন্তরীন কোন্দলে ফয়জুল হক রাজুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাজুর চাচা দবির আলী বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৩ জুন সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। রাজু ছিলো পদবঞ্চিত অংশে। রাজুর পরিবারের অভিযোগ, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রকিব চৌধুরী ও জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনারের নেতৃত্বে রাজুকে হত্যা করা হয়।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হত্যার ঘটনার ৯ মাস পর গত বছরের ১২ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রকিব চৌধুরী, সিলেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনারও ছিলেন। বাকিরাও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে আব্দুর রকিব চৌধুরীসহ ৫ জন পতালক রয়েছেন। দিনার, সলিড, মুর্শেদসহ ৬ জন কারাগারে আছেন। বাকীরা জামিনে আছেন।

পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রাজু হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন আব্দুর রকিব চৌধুরী। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আরিফুল হক চৌধুরী কুমারপাড়াস্থ নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এরপর নেতাকর্মীরা তার বাসা থেকে নিজেদের গন্তব্যে ফিরতে থাকেন। ফয়জুল হক রাজু তার মোটরসাইকেলে (সিলেট-হ-১২-২৩২০) সালাউদ্দিন লিটন ও জাকির হোসেন উজ্জ্বলকে সঙ্গে নিয়ে কুমারপাড়াস্থ প্রধান সড়কে পৌঁছার পরই রকিবের নির্দেশে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার, ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক ফরহাদ হোসেনসহ অন্যরা রামদা, চাপাতি, দা, লোহার রড ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজুর গতিরোধ করে হামলা চালায়। দেলোয়ার হোসেন দিনার, মোস্তাফিজুর রহমান ও এনামুল হকরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।

গুলিতে জাকির হোসেন উজ্জ্বলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। রাজু মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে তার মাথার পেছনে কোপ দেন দিনার। মোফাজ্জাল চৌধুরী মুর্শেদ ধারালো চাপাতি দিয়ে রাজুর মাথা লক্ষ্য করে কোপ দিলে সেটি তার ডান কানের উপরে লাগে। মুহিবুর রহমান রাসেল, সৈয়দ আমিরুল হক সলিড, সাদ্দাম হোসেন, শেখ নয়ন, নজরুল ওরফে জুনিয়র নজরুল, জুমেল আহমদ চৌধুরী, ফাহিম আহমদ তোহা, জাবেদ ওরফে ছেচড়া জাবেদ, আরাফাত এলাহী, রুবেল, আলফু, সাহেদ আহমদ, আফজল, কানা রাসেল, মুর্শেদ আলম রাহেল, সুফিয়ান, একরামুল, মামুন আহমদ, জামাল মিয়া ওরফে জালাল ধারালো দা, রামদা ও ছোরা দিয়ে রাজুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপায়। এছাড়া রাজুর সঙ্গে থাকা জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও সালাউদ্দিন লিটনের ওপরও হামলা চালায় আসামিরা।                       

অভিযোগপত্রে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ৬ আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ফাহিম ও সাদ্দাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিম‚লক জবানবন্দি দেয়। দু’জনের জবানবন্দিতেই রকিব, দিনারসহ বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে। সাদ্দাম তার জবানবন্দিতে রকিবকে নির্দেশদাতা বলে স্বীকারোক্তি দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জাকির হোসেন উজ্জ্বল, সালাউদ্দিন লিটন, মঈনুল করিম ও নজরুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি দেন।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, রাজু হত্যার পর দেশ ছাড়েন প্রধান অভিযুক্ত ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রকিব চৌধুরী। পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন। নিযমিত যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা যায় তাকে। অন্যদিকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার কারাগারে থাকায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্ম সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন নাদিম।

ফয়জুল হক রাজুর চাচা সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দবির আলী সিলেট মিররকে বলেন, রাজু হত্যার বিচারের অপেক্ষায় আছে আমাদের পরিবার। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবি আমাদের।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে রাজু হত্যার সঙ্গে জড়িত রকিব-দিনারসহ সকল আসামীদের বর্জন করে সেই প্রত্যাশা করছি। মেয়র আরিফ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করছেন বলে জানান তিনি।

রাজু হত্যায় বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন সিলেট মিররকে বলেন, রাজু হত্যা মামলা বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রয়েছে। সবার সহযোগীতায় এই মামলায় কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এনসি/বিএ-১০