বৈরিতা ভুলে দীর্ঘদিন পর এক মঞ্চে রতন-শামীম

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


আগস্ট ১৯, ২০২০
১০:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০২০
১০:০৯ অপরাহ্ন



বৈরিতা ভুলে দীর্ঘদিন পর এক মঞ্চে রতন-শামীম

সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান দু'টি গ্রুপের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন দীর্ঘ বৈরিতার প্রাচীর ভেঙ্গে এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সম্পর্কচ্ছেদের দীর্ঘদিন পর গত ১৫ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত শোকসভার এক মঞ্চে বসে শামীম-রতন ফের পুরোনো মিত্রতার জানান দিয়েছেন। উপজেলার রাজনীতি সচেতন মানুষ একে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও কিছু সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মী এ সম্পর্ক জোড়া লাগুক তা চান না বলে জানা গেছে। কিন্তু দল ও উন্নয়নের স্বার্থে এবার তারা একত্রিত হলেন বলে জানিয়েছেন দুই বলয়ের দুই প্রধান ব্যক্তি।

এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউসুফ আল আজাদের মৃত্যুতে রেজাউল করিম শামীমই এ এলাকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি। তবে সাংসদ রতনকে বাদ দিয়ে রাজনীতিতে পটু শামীম বেশিদূর এগোতে পারবেন না বলেও অনেকে মনে করে থাকেন। আবার রাজনীতি করতে হলে রতনকেও শামীমের সঙ্গে মিলতে হবে। সুস্থ রাজনীতি ও উন্নয়নের স্বার্থে দু’জন এক হয়ে কাজ করুন- সেই প্রত্যাশা তাদের।

উপজেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছর যাবৎ শামীম-রতনের বৈরিতা অনেকখানি জনপ্রতিক্রিয়ার বাইরে থাকলেও গতবছরের ১৮ জুনের উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে রতন-শামীমের নাম। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পেতে একদিকে জেলা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা রেজাউল করিম শামীম এবং অন্যদিকে দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদের পক্ষে সাংসদ রতন উঠেপড়ে লাগেন। শেষ পর্যন্ত রতনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নৌকার প্রার্থীতা ইউসুফের ঘাটে নৌকা ভিড়েছিল বলে অনেকেই ধারণা প্রকাশ করে আসছেন।

অপরদিকে নৌকাবঞ্চিত শামীম মোটরসাইকেল প্রতীকে গত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন। মূলত এর মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন দলের পোর খাওয়া নেতা শামীম ও টানা তিনবারের সাংসদ রতনের বিরোধিতা প্রকাশ্য রূপ নেয়। উপজেলা নির্বাচনে এই দুই হেভিওয়েটের প্রতিযোগিতা দেখে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন ওই নির্বাচন ইউসুফ-শামীমের নয়, রতন-শামীমের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অবশেষে বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাংসদ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী ইউসুফ আল আজাদ তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের প্রায় ৮ মাস পর চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা গেলে উপজেলার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পথে মোড় নিতে পারে, বলে ধরে নিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ।

প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান সাদাসিধে ইউসুফ আল আজাদ ক্ষমতাসীন রাজনীতির কোনো পদ-পদবীতে না থাকলেও জামালগঞ্জের রাজনীতিতে বরাবরই বড় ফ্যাক্টর ছিলেন তিনি। যে কারণে সাংসদ রতন নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে জেলার নেতা শামীমের সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদে জড়িয়ে চেয়ারম্যান ইউসুফের মতো সজ্জন ব্যক্তিকে বেছে নেন। এরপর থেকে জামালগঞ্জের রাজনীতি শামীম-রতন বলয়ে বিভক্ত হয়ে এতদিন উষ্ণতা ছড়িয়ে আসছিল। 

মাঝখানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময়কালে দু’জন বিভেদ ভুলে একত্রিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে তা আর হালে পানি পায়নি। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও বিশেষ অতিথি রেজাউল করিম শামীম এক মঞ্চে অবস্থান করায় দু’জনের তুমুল বৈরিতা কেটে গেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এতে দুই বলয়ের একটা অংশ উৎফুল্ল থাকলেও অপর অংশ বেজায় অখুশি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, 'দু’জনের মিল এখনও হয়নি, তবে আলাপ-আলোচনা চলছে। মিলের একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর সবাই মিলে রাজনীতি করাই তো ভালো। এ জন্য রতন সাহেব আমাদের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। কিছুদিনের মধ্যে আমরা বসে একটা সিদ্ধান্তে যাব। পরে এমপি সাহেবকে নিয়ে দুই গ্রুপ এক সঙ্গে বসবে।'

এ ব্যাপারে রেজাউল করিম শামীম বলেন, 'আমাদের মাঝে কখনও দ্বন্দ্ব বা বিরোধ ছিল না, শুধু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। জামালগঞ্জ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে দু’জনের মিলিত হওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আমি সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির নেতৃত্বে এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হোক সেটাই আমার প্রত্যাশা। আর দ্বন্দ্ব বা বিভেদ থাকলে যারা ফায়দা লুটতে পারে, তারা কখনওই ঐক্য চায় না। তবে এদের চাওয়া না চাওয়া ঐক্য প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।'

দু’জনের বৈরিতার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অতীত নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ঐক্যের স্বার্থে সেগুলো ভুলে যেতে চাই। একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল, সেটার অবসান হোক- এটাই একমাত্র চাওয়া।'

আর সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, 'আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া বা বিভেদ নেই, কোনো গ্রুপিংও নেই। দলের স্বার্থে এক মিনিটেই আওয়ামী লীগ এক হতে পারে। এর নামই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ দেশ, দশ ও উন্নয়নের স্বার্থে এক মিনিটে এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ বা বৈরিতা নেই। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।'

 

বিআর/আরআর-০৩