লকডাউনে আয় কমেছে ৯৬ ভাগ পরিবারের

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ২৭, ২০২০
০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২০
০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন



লকডাউনে আয় কমেছে ৯৬ ভাগ পরিবারের

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে লকডাইনের সময়ে ৯৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে বলে আইসিডিডিআর,বির এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

ওই সময়ে দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেকের ‘এক বেলা না খেয়ে থাকার’ অবস্থা হয়েছিল বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।   

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার আইসিডিডিআর,বির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে দেওয়া লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত মহিলারা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

আইসিডিডিআর,বির গবেষক দল এবং অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ নারী ও তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ মহামারি এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশনার প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ। অতি ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হয়। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে দুই মাসের বেশি সারা দেশে ‘লকডাউন’ জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।

ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের দুই হাজার ৪২৪টি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা কেমন ঘটেছে, তা এই গবেষণায় খতিয়ে দেখা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইসিডিডিআর,বি বলছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে, ৯১ শতাংশ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গিয়েছিল। এছাড়া পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনো এক বেলা আহার না করে ছিলেন। 

নারীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ মনে করেন, লকডাউনের কারণে তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গেছে। নারীদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন তাদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন।

এই গবেষক দলের প্রধান গবেষক ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি বলেন, গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ নারী এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব নিরূপন করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারীবান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যাওয়া নির্দেশ করে তারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই গবেষণা মহামারীর ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।

অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল গবেষণার জন্য অর্থায়ন করেছে। আর গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা করেছে অস্ট্রেলিয়ার দোহার্টি ইনস্টিটিউট ও মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়।

বিএ-০২