জৈন্তাপুরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূমি দখল করে দোকান নির্মাণের চেষ্টা

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর


আগস্ট ২৭, ২০২০
০৯:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২০
০৯:২৪ অপরাহ্ন



জৈন্তাপুরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূমি দখল করে দোকান নির্মাণের চেষ্টা

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জৈন্তা রাজ্যের ইতিহাসের পুরাকীর্তিসমূহ। তবে দখলদার বাহিনীর কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে প্রত্নতাতত্ত্বিক নির্দশনগুলো। সম্প্রতি জৈন্তা রাজ্যের অন্যতম নির্দশন বড় দেউল এর ভূমি দখল করে রাতের আঁধারে দোকানঘর নির্মাণ করছে ভূমিখেকো একটি পরিবার। এ অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী বড় দেউল এর ভূমি রক্ষার দাবি জানিয়েছে জৈন্তাপুর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সম্মুখে জৈন্তাপুর স্কুল রোড সংলগ্ন জৈন্তা রাজ্যের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনের বড় দেউলের সম্মুখের কিছু জায়গা নিজেদের দাবি করে ভূমিখেকো একটি পরিবার জায়গা দখল করে বেড়া দিয়ে রাতের আধাঁরে দোকানঘর নির্মাণ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে জৈন্তাপুর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটি বড় দেউলের ধ্বংসাবশেষ ভেঙ্গে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে। পুরাকীর্তি ধ্বংস করে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্দেশে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুক। তিনি ঘটনার সত্যতা দেখতে পান এবং দোকানঘর নির্মাণের কাজ চালাতে সংশ্লিষ্টদের নিষেধ করেন।

জৈন্তাপুর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, 'জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জৈন্তিয়া রাজ্যের ঐহিত্যবাহী পুরাকীর্তির নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। প্রতিনিয়ত একটি চক্র বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে এগুলোকে দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। বড় দেউল নামের একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ এভাবেই ইতিহাস হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি সরানো কারও পক্ষে সম্ভবপর নয়। কী কারণে ভূমিখেকো চক্র এটি ধ্বংস করে দোকানঘর নির্মাণ করছে তা বুঝে উঠতে পারছি না। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ঐহিত্যবাহী পুরাকীর্তি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'পুরাকীর্তির জায়গা যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়, তাহলে জৈন্তিয়ার ইতিহাস রক্ষার জন্য এ সকল ভূমি অধিগ্রহণ করার জোর দাবি জানাই। বড় দেউলসহ জৈন্তাপুরের পুরাকীর্তিসমূহ রক্ষার জন্য উপজেলা সদরে পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে উপজেলা সদর ও সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।'

এ বিষয়ে ভূমি দখলকারীদের দাবি, তারা রাশেল আহমদ নামক এক ব্যক্তির নিকট থেকে এই জায়গাসহ ৩ শতক জায়গা ক্রয় করেছেন। তাদের ক্রয়কৃত ভূমিতে তারা দোকানঘর নির্মাণ করছেন। প্রত্নতত্ত্বের ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ তারা সরিয়েছেন মাত্র। তারা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা সার্ভেয়ার এবং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে কাগজপত্র দেখিয়েছেন বলেও দাবি করেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুক সিলেট মিররকে বলেন, 'সংবাদ পাওয়ার পর পর আমি সেখানে দোকানঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সমন্বয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'

 

আরকে/আরআর-০৭