শায়েস্তাগঞ্জে সাদামাটাভাবেই পবিত্র আশুরা পালিত

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি


আগস্ট ৩১, ২০২০
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২০
০৩:০৬ পূর্বাহ্ন



শায়েস্তাগঞ্জে সাদামাটাভাবেই পবিত্র আশুরা পালিত

আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। সারাদেশে মুসলিম উম্মারা যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালন করছেন।

আশুরা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের একটি দিন। আরবি হিজরি সন অনুসারে ১০ মহররম কারবালায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটি সারাবিশ্বের মুসলমানরা ত্যাগ ও শোকের দিন হিসেবে পালন করেন।

কিন্তু সারাদেশে করোনা মহামারী আকারে ধারণ করায় প্রতিবছরের ন্যায় এবার সংক্ষিপ্তভাবে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা।

এবারের আশুরায় তাজিয়া মিছিলে নেই, নেই  কোনরকম বাধ্যযন্ত্র, বাশি, ঢোল। মিছিলের আগে নেই কারো হাতে লাঠি, দা, কিংবা শাবুল। 

শায়েস্তাগঞ্জে আশুরা উপলক্ষে সব মাজারে বসত ভ্রাম্যমাণ মেলা। এবার এইসবের আমেজ না থাকলেও থেমে নেই মানুষের জারি ও ইয়া হাসান, ইয়া হোসাইন বলে খন্ড খন্ড মিছিল।

সকল অঞ্চলের মানুষ এসে জমায়েত হলে সন্ধ্যার আগে সুরাবই হযরত শাহ কারার ফুল শাহ (রঃ) এর মাজারে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় আশুরার আনুষ্ঠিানিকতা।

এদিকে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এবার আশুরা উপলক্ষে সব ধরনের তাজিয়া, শোক ও পাইক মিছিল নিষিদ্ধ করেছে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ । তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা যাবে। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানস্থলে দাঁ, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

হবিগঞ্জের  মধ্যে সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং অঞ্চলে। প্রতিবছর ১০-১১ গ্রামের মানুষ সুতাং অঞ্চলের সাহেব বাড়িতে তাজিয়া মিছিল নিয়ে এসে সমবেত হন। এবার সরজমিনে দেখা যায়, বিকাল ৪ টায় মানুষজন নিশান হাতে মিছিল নিয়ে আসছেন, কেউ কেউ সাথে তাজিয়াও নিয়ে আসছেন। আগের তুলনায় এবার লোকবল কম হলেও এদের মাঝে কারোই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না।

সবাই সুতাং পাক পাঞ্জাতন মাজারে এসে ইয়া হাসান, ইয়া হোসাইন মিছিল দিতে দিতে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। এদিকে এদেরকে দেখার জন্য শত শত নারী, পুরুষ ও শিশুরা দলবেঁধে এসে হাজির হচ্ছেন।

কথা হয় সুরাবই পাক পাঞ্জাতন মোকামের ওয়াহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এবার মিটিং করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাধ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না, শুধু নিশান নিয়ে প্রতি মোকাম থেকে ৫ জন করে অন্য মাজারে যেতে পারবে। কিন্তু অন্য এলাকার মানুষরা তাজিয়া মিছিল নিয়ে আসতে পারবে না। যার যার মোকামের ঘোড়া তার তার মোকামেই সমাধিত করতে হবে। 

এদিকে, শত শত বছরের ধর্মীয় এই পুরাতন রীতি অত্র এলাকার মানুষদেরকে করোনার ভয় তেমন আটকে রাখতে পারছে না।

তবে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আবার অনেকেই ঘরোয়াভাবে কিংবা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে মসজিদে যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে  দিনটি উদযাপন  করছেন।

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, কোথাও কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে  মিছিল মিটিং ও গণজমায়েত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ এর প্রতেকটি মোকামে মোকামে ৫০-১০০ জন মানুষ হলেই পুলিশ তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। নুরপুর ইউনিয়নের ৭ টা পয়েন্টে পুলিশের  টহল বিদ্যমান আছে, এছাড়াও সাময়িক যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হবিগঞ্জ পুলিশ লাইন থেকে স্পেশাল ফোর্স আনা হয়েছে।

যেখানে প্রতিবছর ৫০-৬০ হাজার মানুষ জমায়েত হত, সেখানে কিছু মানুষ তো আসবেই।

শায়েস্তাগঞ্জ থানার সাব ইন্সপেক্টর রাজিব চন্দ্র সরকার দায়িত্ব পালন করছেন সুরাবই সাহেব বাড়ির মোকামে। তিনি জানান, গতবছরের তুলনায় এবছর আশুরা অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ভাবেই পালন করা হচ্ছে। যেকোনো উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তাতক্ষণিকভাবে  আমরা একশনে যাব।

এসডি/বিএ-০৪