শামস শামীম, সুনামগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
১২:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০
১২:০৩ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল। তার প্রায় ৩ হাল আমন ধান চাষের জমি রয়েছে। প্রতিবছর আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তার জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মাত্র ১ হাল জমি চাষ করতে পেরেছেন। তিন দফা বন্যার কারণে বীজতলা যথাসময়ে তৈরি করতে না পারা এবং আমন ধানের জমি থেকে বন্যার পানি না নামার কারণে তিনি ধান গাছ রোপণ পারছেন না।
শুধু আব্দুল জলিলই নন, একই উপজেলার জয়কলস গ্রামের কালা দাস, ফতেপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জগাইরগাঁও গ্রামের আব্দুল আলীসহ জেলার আমন চাষীদের এবার একই অবস্থা। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ বছর তিন দফা বন্যার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে আমন চাষ। অন্যান্য বছর এই সময়ে এসে আমন ধান চাষ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখনও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চাষ করতে পারেননি কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, জেলায় এ বছর ৮১ হাজার ৩শ ৮৭ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে মাত্র ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। প্রায় অর্ধেক জমি এখনও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। সেই জমিগুলো এখনও পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি বিভাগের মতে, বন্যায় এ বছর আমনের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথম দফা বন্যায় প্রায় ৫৯ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছিল। বীজতলা তৈরিতে বিলম্ব ও পানি নামার কারণে এবার আমন ধান চাষ প্রায় একমাস পিছিয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জে সম্প্রতি ২৫ দিনের ব্যবধানে ৩টি বন্যা হয়। প্রথম দফা বন্যা হয় গত ২৬ জুন থেকে, দ্বিতীয় দফা বন্যা হয় ৯ জুলাই থেকে আর ৩য় দফা বন্যা হয় ১৯ জুলাই থেকে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় আমনের বীজতলা ডুবে যায়। এ কারণে আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে সমস্যায় পড়েন কৃষক। বিলম্বে বীজতলা তৈরি করায় আমন মৌসুমও বিলম্বিত হতে থাকে। তাছাড়া এখনও প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টিপাত ও বন্যার পানি দেরিতে নামার কারণে আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়ে গেছে। এ কারণে জমি চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। জমি চাষ করতে না পারলে খাদ্য সংকটের মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন তারা।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘ইলা সময় আইয়া আমরার আমন জমিনো রোয়া লাগানি শেষ অইযায়। ইবার আমি ৩৬ কিয়ার জমিনের মধ্যে মাত্র ১২ কিয়ারও ধান লাগাইছি। ক্ষেতো অখনও পানি থাকায় বাকি জমিনো ধান লাগাইতে পারমু কি না খইতাম পারতাম না। করোনার মাঝে রুজি-উজি বন্ধ। জমিনো ধান না লাগাইতে পারলে তো না খাইয়া থাকতে অইব।’
জয়কলস গ্রামের কৃষক কালা দাস বলেন, ‘ইলা তিন বইন্যা একমাসের মধ্যে দেখছি না জীবনে। বন্যায় দুইবার জালা নষ্ট অইছে। এখন দিরং কইরা জালা ফালাইছি। ইতার লাগি দিরং করায় ধানও লাগাইরাম দেরিতে। বড় ক্ষতি অইগেছে ইবার।’
একই উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘করোনা ও বন্যায় আমরার কৃষকরার অবস্থা কাহিল। রোজ বৃষ্টি-বাদল চলের। ইতার লাগি বইন্যার পানি কমতাছে না। দেরি কইরা ধান লাগাইলে ফলনও ভালা অইতো না। সব ক্ষেতো মনে অয় ইবার আমন চাষ করতা পারতাম না।’
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, ‘তিন দফা বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে আমনের বীজতলা। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে বিলম্বিত হচ্ছে আমন চাষ। এখনও অনেক আমন জমি পানিতে ডুবে আছে। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এবার আমন চাষ করা যাবে। বিলম্বে চাষ হলে ফলন কিছুটা কমতে পারে।’
এসএস/আরআর-০৫