নমুনা সংগ্রহ কমলেও কমেনি ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
০৬:১৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন



নমুনা সংগ্রহ কমলেও কমেনি ভোগান্তি
শামসুদ্দিন হাসপাতাল

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুইশ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। একমাত্র বুথে অনেক মানুষের নমুনা সংগ্রহের ফলে তখন নমুনা দিতে আসা লোকজনের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছিল। এখন প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি। তবু কমেনি ভোগান্তি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোগান্তি বেড়েছে।

গত মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিলেটেও পাওয়া যায় করোনা আক্রান্ত রোগী। প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এরপর করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথমদিকে কম সংখ্যক লোক নমুনা দিতে হাসপাতালে যেতেন। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নমুনা প্রদানের জন্য হাসপাতালে জনসাধারণের ভিড় বাড়তে থাকে। নমুনাদাতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ে ভোগান্তিও। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হতো। গত ২৮ জুন দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও শনাক্তকরণে। উপসর্গহীন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়ায় নমুনাদাতার সংখ্যা আরও কমে যায়। বর্তমানে মাত্র ৩০-৩৫ জন নমুনা দিতে প্রতিদিন হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবু কমেনি ভোগান্তি। 

সকাল সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত নমুনাদাতাদের নিবন্ধন করা হয় শামসুদ্দিন হাসপাতালে। নিবন্ধনের পর সাড়ে দশটার দিকে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। নমুনা সংগ্রহ শুরু হয় সাড়ে ১২টায়। নিবন্ধনের পর সঙ্গে সঙ্গে নমুনা দেওয়ার সুযোগ না থাকায় মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ফি জমা দেওয়ার পর আরও আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে; অথবা বাসায় গিয়ে আড়াই ঘণ্টা পর আবার এসে নমুনা দিতে হচ্ছে। সকাল এগারোটার পর যারা নিবন্ধন করতে আসছেন তাদেরকে পরের দিন আসতে বলা হচ্ছে। এতে সময়ের যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি বারবার আসা-যাওয়ার ফলে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকিও। 

গত বৃহস্পতিবার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা মানুষের কোনো ভিড় নেই। সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসা কলেজ ছাত্র ফাহিম সিলেট মিররকে বলেন, ‘বাবা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসক করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে বলেছেন। গতকাল সকাল ১১টায় এসে দেখি সিরিয়াল শেষ হয়ে গেছে। তাই পরের দিন আসতে বলা হয়েছে। আজ ভোরে বাবাকে নিয়ে রওয়ানা হয়েছি। এখানে এসে দেখি একবার নিবন্ধন করতে হয়। একবার টাকা জমা দিতে হয়। পরে সাড়ে বারোটায় আবার এসে নমুনা দিতে হয়। এতো সময় এখানে অপেক্ষা করাটা অনেক কষ্টকর।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ফি নির্ধারণ করেছে। তারপরও ভোগান্তি কমছে না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ফলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিঁও বাড়ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তিনি, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন নমুনা দিতে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে আজ শুধু একজনেরই নমুনা দেওয়া যাবে। অন্যদের নমুনা দিতে পরের দিন আসতে হবে। 

নমুনা জমা দিতে আসা নগরের নয়াসড়ক এলাকার বাসিন্দা মাহফুজ হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘সকাল আটটায় এসে এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছি। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর নমুনা জমা দিতে পেরেছি।’ ভোগান্তির কারণে এখন উপসর্গ থাকা সত্তে¡ও নমুনা পরীক্ষা করাতে আসছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ধরনের অভিযোগ করেছেন নমুনা দিতে আসা অনেকেই। তারা বলছেন নিবন্ধন, টাকা জমা এবং নমুনা সংগ্রহ একবারেই করার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেট মিররকে বলেন, ‘একবারে নিবন্ধন, টাকা সংগ্রহ ও নমুনা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমাদের একটা প্রসেস আছে। এই প্রসেস অনুসরণ করতে সময় লাগে। এছাড়া আমরা তো একদিনেই নমুনা সংগ্রহ করে নিচ্ছি। অন্যান্য জায়গায় নিবন্ধনের পরের দিন নমুনা দিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে দুইশর মতো নমুনা সংগ্রহ করতাম। মাঝে প্রায় ১২০টি করে নমুনা সংগ্রহ করেছি। কিন্তু বর্তমানে কম সংগ্রহ করতে হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ কমার প্রধান কারণ বিদেশযাত্রীরা। বিদেশযাত্রীদের নমুনাই এখন বেশি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকেও নমুনা আসে। ফলে ওসমানীর ল্যাবে চাপ বাড়ছে। ওসমানীর ল্যাব থেকে আমাদের যে পরিমান নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয় আমরা তাই করি।’ সিলেটে আরও একটি ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হলে আরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী রবিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৩২৩ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৩২৫ জন। 

এনএইচ/বিএ-০১