‘লাকীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন



‘লাকীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’

কোনো দুর্ঘটনায় নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর লাকী রাণী পালকে শশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন লাকীর ছোট বোন প্রিয়াংকা রাণী পাল। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনাবশতঃ আগুনে পুড়ে লাকীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন শশুর জালালপুুরের সেনগ্রামের বাসিন্দা হলধর চন্দ্র পাল। 

লাকীর মৃত্যুর পর স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন প্রিয়াংকা রাণী পাল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজন লাকী রাণী পালকে পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচারও চালাচ্ছেন তারা। 

লিখিত বক্তব্যে প্রিয়াংকা রাণী পাল বলেন, ‘আমার বড় বোন লাকী রাণী পাল বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শ্বশুরালয়ের লোকজন বেতনের সমস্ত টাকা নিয়ে নিত। শুধু তাই নয়, হিমাদ্রী পাল প্রায়ই আমাদের বাসা থেকে টাকা নিয়ে দিতে লাকীকে চাপ প্রয়োগ করত। কিন্তু আমার বোন তাদের কথায় সায় না দেওয়ায় তারা প্রায়ই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। বোন বিষয়টি অনেকবার আমাদেরকে জানিয়েছে। অবুঝ সন্তানের দিকে তাকিয়ে সে অনেক সময় মুখ বুঝে এগুলো সহ্য করেছে। এমনকি আমার বোনের বেতনের পুরো টাকা তারা নিয়ে গেলেও তাকে অফিসে যাতায়াতের খরচ দিতে কার্পণ্য করত। পাউবো থেকে আমার বোনকে সরকারি কোয়ার্টারে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী তাকে নিয়ে সরকারি কোয়ার্টার কিংবা নগরের মেজরটিলা এলাকায় হিমাদ্রী পালদের নিজস্ব বাসায় রাখতে রাজি হয়নি। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমার বোন দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকেই অফিসে আসা-যাওয়া করত।’

প্রিয়াংকা বলেন, ‘গত ৯ আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় বাবার মোবাইলে ফোন করে লাকীর শ্বশুর হলধর চন্দ্র পাল বলেন, ‘লাকীর শরীরে আগুন লেগেছে। আমরা ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। এমন খবর শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে আমি এবং আমার বাবা প্রদীপ পাল দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমার বোনের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। আমি বোনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। তাকে কীভাবে এবং কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে বিস্তারিত তিনি আমাকে বলেন। শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় এবং লাকীর অবস্থা ক্রমশঃ খারাপের দিকে যাওয়ায় ডাক্তাররা তাকে আইসিইউতে নিয়ে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আমার বোন মারা যান।’

প্রিয়াংকা বলেন, ‘আমার বোনকে আহত অবস্থায় যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তার স্বামী হিমাদ্রী পাল ও শ্বাশুড়ি শিখা রাণী পাল একবারের জন্যও হাসপাতালে আসেননি। ময়না তদন্ত শেষে আমার বোনের লাশ নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি সেনগ্রামে চলে যান সবাই। পরদিন সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ও লাকীর শ্বশুর আমার বাবাকে থানায় যেতে বলেন। আমার বাবা হার্টের রোগী। মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় তিনি থানায় যান। এ সময় তারা থানার বাইরে আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে বলে, তাদের কথামতো স্বাক্ষর না দিলে আমার বোনের ছেলে হিরক পালকে মেরে ফেলবে। আসামিদের হুমকি ও শিশু সন্তানের প্রাণের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার বোনের মৃত্যু সংবাদটি বাবা লিখিতভাবে মোগলাবাজার থানাকে অবহিত করেন। তাদের আগের তৈরি কাগজে আমার পিতার স্বাক্ষর তারা জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। যা আমরা পরিবারের লোকজন কিছুই জানতে পারিনি।’

প্রিয়াংকা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে লাকী তার স্বামী, দেবর, শাশুড়ি ও শশুর মিলে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরানোর কথা বলে গেছেন। প্রায় সমস্ত শরীর পুড়ে যাওয়ার পর তারা তাকে হাসপাতালে নেয়।’ 

সংবাদ সম্মেলনে হত্যা মামলার আসামি লাকীর স্বামী হিমাদ্রী পাল, শ্বাশড়ি শিখা রাণী পাল, দেবর হিমেল পাল এবং শ্বশুর হলধর চন্দ্র পালকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রিয়াংকা। সংবাদ সম্মেলনে লাকী পালের বাবা প্রদীপ পাল, মা ও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন।

বিএ-০৬