সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
০২:১৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
০২:১৪ পূর্বাহ্ন
মছুর আলী
পরিবারের একমাত্র কর্তা মছুর আলী। মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিনযাপন করে আসছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দিনমজুর। তবে এখন তিনি থমকে যাওয়া জীবনের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
মছুর আলীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা এলাকার ডুমাবাড়ি গ্রামে। তিন বছর আগে বাবার মৃত্যু ও নিজের বিয়ের পর পরিবারের পুরো দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। নিজে দিনমজুর হলেও ১ ছেলে ও ৩ মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করাই ছিল তার লক্ষ্য। মছুর আলীর রোজগার দিয়ে চলে ৯ জনের পুরো সংসার। তবে কখনোই হতাশ হননি তিনি। চার সন্তান ও স্ত্রী এবং নিজের মাকে নিয়ে হাসিখুশিভাবেই দিন পার করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুর্ঘটনায় তার সবকিছু ভেঙে চুরমার হতে চলেছে।
ঘটনাটি চলতি বছরের ২০ আগস্ট তারিখের। ওইদিন মছুর আলীর জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনের মতো ওইদিন ধান ভাঙার মেশিন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এক বাড়িতে ধান ভাঙার সময় হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তার ডান হাতটি মেশিনের ভেতরে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তার হাতের কনুই পর্যন্ত ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার ৪/৫ দিন পর মছুরের ডান হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে টাকার অভাবে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবার।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৩৫ বছর বয়সের মছুর আলী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ধান ভাঙার মেশিনটি তার মামাতো ভাই কিনে দিয়েছিলেন। মেশিন চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে কোনোমতে চলত তার পরিবার। ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করতেন তিনি। পরিবারের একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা ছিলেন মছুর আলী। এখন তার চিকিৎসার অর্থ জোগাতে না পারায় পরিবারের দিনরাত কাটছে বিষণ্নতা আর হতাশায়।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, 'মছুর আলীর অর্থ উপার্জনের একমাত্র সম্বল ছিল ধান ভাঙার মেশিন। গ্রামে হাতেগোনা কয়েকটি মেশিনের মধ্যে ছিল তার এই মেশিনটি। দুর্ঘটনার পর পরই আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্থিক আবেদন চেয়ে অনেক পোস্ট করেছি, বড় বড় অনেক গ্রুপেও পোস্ট দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাড়াও পেয়েছি। কিন্তু মছুরের চিকিৎসার জন্য আরও বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন।'
এদিকে, এ ঘটনা চোখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ খান শাহীনের। তিনি কেয়ার ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক। তার বাড়িও জুড়ী উপজেলায়। শাহীন করোনার জন্য গত ছয় মাস ধরে বাড়িতেই আছেন। মছুরের চিকিৎসার টাকার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে। তার এই উদ্যোগের ফলে তিনি উপজেলার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।
কথা হয় মারুফ খান শাহীনের সঙ্গে। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, 'মছুর আলী ভাইয়ের ঘটনাটি জানার পর আমি তার বাড়িতে যাই। কৃত্রিম ফাংশনাল হাত লাগানোর জন্য তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। কৃত্রিম এই হাতটি লাগাতে ২ লাখ টাকার মতো লাগবে। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা মোটেও সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'টাকার অভাবে একজন মানুষ সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই উদ্যোগটি হাতে নিই। এ পর্যন্ত আমরা ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি। বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে হয়তো আমাদের এ কার্যক্রম সফল হবে আর একজন মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন। এ কাজের জন্য ০১৭১৪-৯৯১৯৭৭ নম্বরে যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তা পাঠাতে পারেন।'
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাশ সিলেট মিররকে বলেন, 'ঘটনাটি আমি শুনেছি। দুই-একদিনের মধ্যে মছুর আলীর বাড়িতে যাব। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।'
এসএইচ/আরআর-০৯