‘আজমিরীগঞ্জ আ. লীগ সভাপতি মিজবাহ যুদ্ধাপরাধী’

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
০৪:৩০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
০৪:৩০ পূর্বাহ্ন



‘আজমিরীগঞ্জ আ. লীগ সভাপতি মিজবাহ যুদ্ধাপরাধী’
তদন্তের দাবি হবিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়া যুদ্ধাপরাধী বলে দাবি করেছেন হবিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা। সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। মুক্তিযোদ্ধারা এই দুই ভাইয়ের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হয়েও অত্যন্ত সুকৌশলে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দলের বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন নূরুল হক ভূইয়া ও তার ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া। মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া একাধিকবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভরাডুবি উপহার দিয়েছেন। শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধী হওয়ার কারণে মানুষ তাকে গ্রহণ করেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই। কেউ কথা বললেই তাকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। এখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের এ অপকর্ম নিয়ে কথা বলায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছেন অভিযুক্ত দুই ভাই।’ মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের অপকর্মের বিষয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সাবেক কমান্ডার তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘একাত্তরে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার ট্রাইব্যুনালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া, তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়া, আলী রেজা ও সিদ্দিক মিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর থেকেই নিজেকে বাঁচাতে মিসবাহ ভূইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে আসছেন।’

তিনি বলেন- ‘১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু লঞ্চযোগে আজমিরীগঞ্জে প্রচারণায় এসেছিলেন। সে সময় মিজবাহ উদ্দিন ভুইয়া ও তার ভাই নূরুল হক ভূইয়া আজমিরীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর লঞ্চ ঘাটে ভিড়াতে বাধা প্রদান করে। পরে বঙ্গবন্ধু লঞ্চ থেকে ভাষণ প্রদান করেন এবং জনতা ও নৌকামাঝি মরম আলী তার ছেলের সহযোগিতায় মাজার জিয়ারত করে আজমিরীগঞ্জ ত্যাগ করেন। লঞ্চে মহামান্য বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলেন। যা এলাকার প্রবীণরা অবগত রয়েছেন। এছাড়াও ৭১ এ পাকহানাদার বাহিনীকে চলাচলের জন্য তারা লঞ্চ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা, লুটপাট, চোরাচালানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুন্সী আব্দুর রহিম জুয়েল। তিনি বলেন- ‘দিশেহারা মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ভারসাম্যহীন হয়ে একেক সময়ে একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভুল বুঝিয়ে মামলা চলাকালীন মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বলেছি- ১৯৭১ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধপরাধ মামলার আসামি নূরুল হক ভূইয়া, তার ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভুইয়া, আলী রেজা, সিদ্দিক আলী বিথঙ্গল গ্রামের আদম আলী, ওয়াহাব মিয়া, লক্ষন সরকার, আরাদন সরকার ও প্রমোদ রায় এই পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করেছে, লুটতরাজ করেছে, অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।’ এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন দাস পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড ইলিয়াছ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, মর্তুজ আলী, আক্কেল আলী, রমজান আলী, হরেকৃষ্ণ দাস, সুনীল দাস, মনি লাল দাস, পিতাম্বর দাস, নিখিল দাস, রাখেশ সরকার, হেমেন্দ্র মাস্টার, দিলীপ কুমার চৌধুরী, রজনী, ছোবহান মিয়াসহ অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।

বিএ-০৩