তাহিরপুরে বিজিবি-এলাকাবাসী সংঘর্ষ, শিশুসহ আহত অনেক

তাহিরপুর প্রতিনিধি


অক্টোবর ২২, ২০২০
১২:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০২০
১২:০৭ অপরাহ্ন



তাহিরপুরে বিজিবি-এলাকাবাসী সংঘর্ষ, শিশুসহ আহত অনেক

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে বিজিবি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং এ ঘটনায় শিশু, বিজিবির দুই সদস্য, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও স্থানীয় বেশ কয়েকজন লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা সীমান্তের শাহিদাবাদ বর্ডার হাট সংলগ্ন (বরই বাগান) এলাকায়। আহত শিশু বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়ন এর মুকসেদ পুর (উত্তর) গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে সুমন (৮)। আহত অন্যান্যদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এর উপ পরিচালক মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হোন। এবং সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

সরেজমিনে রাত প্রায় ১০ টার দিকে বিজিবির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহিদাবাদ বর্ডার হাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কুড়ানো কয়লা নিয়ে আসার পথে বিজিবির সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা ল্যান্স নায়েক নাঈম ইসলাম তাদের পথরোধ করে। এ সময় কুড়ানো কয়লা ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং সাথে থাকা শিশুটিও দৌড় দিলে হোঁচট খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে  মোকাম সংলগ্ন একটি দোকান ঘরে নিয়ে পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে।

এদিকে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিজিবির গোয়েন্দা কর্মকর্তা শিশুটিকে বেদম প্রহার করলে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে লাউড়েরগড় বাজারের একটি ফার্মেসিতে এবং পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়। 

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বলেন, শিশুটির শরীরে গুরুতর কোন আঘাত দেখা যায়নি, রক্তাক্তও হয়নি। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে এ প্রতিবেদককে স্থানীয়রা আরও জানান, বিজিবি জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে এবং দোকানপাট ভাংচুর করে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, বিজিবির হামলায় শিশুটি মারা গেছে।

এ খবর পেয়ে প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিল করতে থাকে এবং বেশ কিছু স্থানীয় লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই বিজিবির গোয়েন্দা কর্মকর্তার উপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এমন সময় টহলরত সিপাহি আরজু এগিয়ে আসলে উত্তেজিত জনতা তাকেও লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে টহলরত বিজিবির বাকি সদস্যরাও এগিয়ে আসে। শুরু হয় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিজিবিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। 

একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আ. রাজ্জাক এসএমজি'র ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

ঘটনার খবর পেয়ে তাহিরপুর থানা ওসি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার এর নেতৃত্বে এসআই দ্বীপঙ্কর কান্তি বিশ্বাস, পাপেল রায়, মিজানুর রহমান ও বাদাঘাট ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিজিবি এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। 

এ ঘটনায় বিজিবি-২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মাকসুদুল আলম জানিয়েছেন, ঘটনাটি যে ভাবে প্রচার হচ্ছে তা না। সীমান্ত সংলগ্ন জাদুকাটা নদীতে শ্রমিকদের ধাওয়া করলে সাথে থাকা শিশু সুমন হোঁচট খেয়ে আঘাত পেলে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে শিশুটি মারা গেছে।  পরে স্থানীয় লোকজন বিজিবির উপর হামলা চালায়। এসময় বিজিবি আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

এএইচি/বিএ-০৭