পরিবার নিয়ে বিপাকে জন্মান্ধ বাউল বিশ্বজিৎ

আনোয়ার হোসেন মিঠু, নবীগঞ্জ


নভেম্বর ১৩, ২০২০
০৭:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৩, ২০২০
০৭:৪৯ অপরাহ্ন



পরিবার নিয়ে বিপাকে জন্মান্ধ বাউল বিশ্বজিৎ

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এক অসহায় পরিবারের জীবন চলে অন্ধ ছেলের গানের টাকা দিয়ে। দারিদ্রতার আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা তাদের জীবন। নবীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর পশ্চিম বড় ভাকৈর ইউনিয়নের ফতেহপুর লামাহাটি গ্রামের বাসিন্দা নরেন্দ্র বৈষ্ণবের তার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় মেয়েকে ধার-দেনা করে অতিকষ্টে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। পরে আরেক মেয়েকেও ধার-দেনা করে বিয়ে দেওয়া হয়। ২য় ছেলে বিশ্বজিৎ বৈষ্ণব (২৪) ও ছোট ছেলে বিধুর বৈষ্ণব (১২) জন্মান্ধ। জন্মের পর পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে পাননি তারা। পরিবারের কর্তা নরেন্দ্র বৈষ্ণব হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। অনাহারে-অর্ধাহারে চলে তাদের সংসার।

এমন করুণ দশায় পরিবারের হাল ধরেছেন অন্ধ ছেলে বিশ্বজিৎ বৈষ্ণব। তিনি মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে হয়ে উঠেছেন বাউলশিল্পী। একসময় বিশ্বজিৎ বাউল শিল্পী আব্দুস ছালামের সাথে যোগাযোগ করে কিছু তালিম নেন। নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসেন গান ও বেহালা। অন্ধ ছোটভাই বিধুর বৈষ্ণব নিজে নিজে ঢোল বাজানো শিখে ফেলেন। একপর্যায়ে দুই ভাই মিলে পরিবারের হাল ধরেন। বাবার চিকিৎসার খরচ আর পরিবারের সবার মুখে একমুঠো ভাত যোগাড় করতে বেরিয়ে পড়েন পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে। জমিয়ে তোলেন গানের আসর। অন্ধ এই বাউলশিল্পীর গানে মুগ্ধ হয়ে উপস্থিত লোকজন যা দেন তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। ছোটভাই অন্ধ বিধুর বৈষ্ণব ঢোল বাজিয়ে আর অসুস্থ বাবা নরেন্দ্র বৈষ্ণব মন্দিরা বাজিয়ে গানে সহযোগিতা করেন। তাদের বৃদ্ধা মা মুক্তা রানী বৈষ্ণবও বিভিন্নভাবে ছেলেদের উৎসাহ দেন ও সহযোগিতা করেন। গান গেয়ে দৈনিক ১শ টাকার মতো উপার্জন করেন তারা। যাতায়াত খরচ বাদে যা থাকে তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।

সম্প্রতি নবীগঞ্জ শহরে গানের বিরতিতে কথা হয় তাদের সঙ্গে। কথার শুরুতেই আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অন্ধ বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, পরিবারের আহার জোটাতে এবং বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ইচ্ছা করলে ভিক্ষায় নামতে পারতেন তারা। কিন্তু ভিক্ষা করা তাদের পছন্দ নয়। তাই মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে এবং ওস্তাদ বাউল ছালামের কাছে তালিম নিয়ে তিনি নিজেকে একজন বাউলশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। মাঝে-মধ্যে লোকজন আদর করে তাদেরকে বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রামে নেন। সেখানে হাজারখানেক টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের দুই ভাইকে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েছেন।

তিনি নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বলেন, তার স্বপ্ন হলো একজন পরিপূর্ণ বাউলশিল্পী হওয়া। কিন্তু আশঙ্কা করছেন তার এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ দারিদ্রতার আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা তার পরিবার। তাই তার আশা, জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে তাদের পরিবারের এই করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরলে দেশবাসীর কাছ থেকে হয়তো তিনি সহযোগিতা পাবেন। এছাড়া তাদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

এএম/আরআর-০৬