নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১৬, ২০২০
০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ১৬, ২০২০
০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
সারাদেশের মধ্যে সিলেট বিভাগের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন, বয়স অনুপাতে উচ্চতা এবং বয়স অনুপাতে ওজন কম তাদের।
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে সারাদেশে ক্ষীণকায় ৮ শতাংশ শিশু। আর সিলেট বিভাগে ১০ শতাংশ শিশু ক্ষীণকায়। সিলেটে খর্বাকৃতির শিশুর হারও উদ্বেগজনক। সারাদেশে ৩১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির হলেও সিলেটে খর্বাকৃতির শিশু ৪৩ শতাংশ। সিলেটের শিশুদের ওজনও তুলনামূলক অনেক কম। সারাদেশে কম ওজনের শিশু ২২ শতাংশ। কিন্তু সিলেটে ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সিলেট জেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির এক সভায় জরিপের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। শক্তি ও আমিষের অভাবে অপুষ্টিজনিত কারণে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই সমস্যায় ভুগছে বলে জরিপের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।
বিডিএইচএস পরিচালিত জরিপের তথ্যে বলা হয়, অপুষ্টির তিনটি সূচকেই সিলেট বিভাগের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা বেশি। সারাদেশে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম (ওয়াস্টিং) ৮ শতাংশ শিশুর। আর সিলেট বিভাগে ওজন কম ১০ শতাংশ শিশুর। এই তালিকায় দুই অঙ্কের ঘরে নেই বাংলাদেশের আর কোনো বিভাগ। অন্যদিকে, বয়স অনুপাতে উচ্চতা কম (স্টানটিং) শিশুদের তালিকায়ও পিছিয়ে থাকাদের দলে সবার উপরে সিলেট বিভাগ। বিভাগের ৫ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০০ জন শিশুতে ৪৩ জন শিশুই এই সমস্যায় ভুগছে। যেখানে জাতীয়ভাবে প্রতি ১০০ জনে ভুগছে মাত্র ৩১ জন।
অপুষ্টির আরও একটি সূচক বয়স অনুপাতে ওজন কম (আন্ডার ওয়েট) হওয়া। এই তালিকায় সিলেটের ধারেকাছেও নেই আর কোনো বিভাগ। সিলেটে ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম। যেখানে জাতীয় হার মাত্র ২২ শতাংশ।
জরিপের আট বিভাগের চিত্রে দেখা যায়, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম (ওয়াস্টিং) এর তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রংপুর বিভাগ। বিভাগের মাত্র ৭ শতাংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় এই হার ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে এই হার ৯ শতাংশ। এই সূচকে সিলেট ছাড়া আর কেউ নেই দুই অঙ্কের ঘরে।
বয়স অনুপাতে উচ্চতা কম (স্টানটিং) হওয়া সারাদেশের বাকি বিভাগগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশ হার নিয়ে সিলেটের পরেই অবস্থান করছে বরিশাল বিভাগ। ৩৮ শতাংশ নিয়ে তালিকার তৃতীয়তে চট্টগ্রাম বিভাগ। এছাড়া ময়মনসিংহে ৩৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩১ শতাংশ, রংপুরে ৩০ শতাংশ, খুলনায় ২৮ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ শতাংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে।
উপরের দুই সূচকে সিলেটের সঙ্গে বাকি বিভাগগুলোর হারের ব্যবধান খুব বেশি নয়। তবে বয়স অনুপাতে ওজন কম (আন্ডার ওয়েট) এর তালিকায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে সিলেট। যেখানে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বরিশাল ও রাজশাহীতে কম ওজনের শিশু ২৩ শতাংশ। তালিকার তৃতীয়তে যৌথভাবে চট্টগ্রাম ও রংপুর ২১ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২০ শতাংশ এবং ঢাকা ও খুলনায় মাত্র ১৯ শতাংশ। তাদেরকে ছাপিয়ে সিলেট বিভাগের এই হার ৩৩ শতাংশ।
চা বাগান এলাকার এবং হাওরাঞ্চলের কারণে অপুষ্টির শিকার শিশুদের তালিকায় সিলেটের হার সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘চা বাগান ও হাওরাঞ্চলের শিশুরা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পায় না। যেহেতু সিলেট অঞ্চলে অনেকগুলো চা বাগান এবং হাওর আছে। তাই সিলেট বিভাগের শিশুরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বেশি। এছাড়া জেনেটিক কারণেও তারা অপুষ্টিতে ভুগছে।’
তিনি বলেন, ‘চা বাগান ও হাওরাঞ্চলে এখনও স্বাস্থ্যকর্মীরা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্তভাবে পৌঁছাতে পারেননি। তাছাড়া গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারছেন না। সন্তানকে গর্ভে নিয়েই ভারী কাজকর্ম করছেন। জন্মের পর শিশুরা অসুস্থ হলেও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না। এ কারণে শিশুদের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না। ফলে অপুষ্টির তিনটি সূচকেই সিলেট বিভাগ সবার উপরে।’
এই হার হ্রাস করার লক্ষে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করেছে জানিয়ে ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকারি উদ্যোগে আমরা প্রথমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। এখন সেই সমস্যাগুলো সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি অচিরেই সিলেট বিভাগে অপুষ্টিজনিত শিশুর হার কমে আসবে।
আরসি/বিএ-০২