সিলেট মিরর ডেস্ক
নভেম্বর ২২, ২০২০
০১:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০২০
০১:৩৪ অপরাহ্ন
স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা থানায় তিনটি মামলা দায়ের করে তাকে সেই থানায় সোপর্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম। তিনি বলেন, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, বিদেশি মদ ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে তিনটি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ প্রত্যেকটি মামলায় আলাদা করে তার সাত দিন করে রিমান্ড চাইবে।
রবিবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে র্যাব গোল্ডেন মনিরকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যায় বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এর আগে, গত ২০ নভেম্বর মনিরের বাড্ডাস্থ বাসায় রাতভর অভিযান চালিয়ে পরদিন সকালে (২১ নভেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর করা সংবাদ সম্মেলনে র্যাব বাড্ডার ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত ছয়তলা ভবনের সেই বাসা থেকে অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও নগদ টাকা জব্দ করার বিষয়টি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র্যাবের পরিচালক (আইন ও মিডিয়া) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ। সেখানে তিনি গোল্ডেন মনিরের বিক্রয়কর্মী থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার পেছনের গল্প তুলে ধরেন।
কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘অভিযানকালে মনিরের বাসা থেকে ১০টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা (বাংলাদেশি নয় লাখ টাকা), ৬০০ ভরি সোনা (প্রায় আট কেজি) ও এক কোটি নয় লাখ টাকা নগদ জব্দ করেছি।’
‘অভিযুক্ত মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির মূলত একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারি এবং ভূমির দালাল। তিনি একটি গাড়ির শোরুমের সত্ত্বাধিকারী। পাশাপাশি গাউছিয়াতে একটি স্বর্ণের দোকানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে’, বলেন তিনি।
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তার বাসা থেকে দুটি বিলাসবহুল অনুমোদনহীন বিদেশি গাড়ি জব্দ করেছি। যার একেকটির মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। পাশাপাশি তার কার সিলেকশন থেকেও তিনটি বিলাসবহুল অনুমোদহীন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।’
‘গ্রেপ্তারকৃত মনির ৯০ দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে ক্রোকারিজ, লাগেজ ব্যবসা (ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পণ্য দেশে আনা) এবং এক পর্যায়ে স্বর্ণ চোরাকারবারের সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ অবৈধ পথে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন’, যোগ করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মনিরের স্বর্ণ চোরাচালানের রুট ছিল ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ভারত। এই সব দেশ থেকে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বাংলাদেশে আমদানি করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে তার নাম হয়ে যায় গোল্ডেন মনির।’
স্বর্ণ চোরাকারবারের জন্য মনিরের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয় বলেও জানান তিনি।
র্যাবের পরিচালক বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের আরেকটি পরিচয় আছে- ভূমিদস্যু। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকা শহরের ডিআইটি প্রজেক্ট, পাশাপাশি বাড্ডা, নিকুঞ্জ, উত্তরা এবং কেরানীগঞ্জে তার দুই শতাধিকের বেশি প্লট আছে বলে জানতে পেরেছে র্যাব।’
ইতোমধ্যে মনির ৩০টি প্লটের কথা প্রাথমিকভাবে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘মনির রাজউকের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্বর্ণ চোরাকারবারি করে তার যে সম্পদের পরিমাণ, সেটি প্রায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে।’
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য দুদক, বিআরটিএ, মানিলন্ডারিংয়ের জন্য সিআইডি এবং ট্যাক্স ফাঁকি বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে র্যাব।’
বিএ-০৯