তাজপুর উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : চিকিৎসার অভাবে অসহায় রোগীরা

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


নভেম্বর ২৫, ২০২০
০৫:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০২০
০৫:২৮ অপরাহ্ন



তাজপুর উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : চিকিৎসার অভাবে অসহায় রোগীরা

চিকিৎসককে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত প্রতিবন্ধীরা সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার আসেন সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি সময়সূচির তোয়াক্কা না করে যখন ইচ্ছা তখন কমপ্লেক্সে আসা-যাওয়া করছেন। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগীকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

জানা যায়, ওসমানীনগর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাজপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে রোগীরা এখানে এলেও কোনো প্রকার সেবা পাচ্ছেন না তারা। বর্তমানে ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করতে হলে তার জন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসার কর্তৃক রিপোর্ট গ্রহণ করতে হয়। ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত প্রতিবন্ধী রোগীরা ডাক্তারি রিপোর্ট করতে আসতে হয় তাজপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সাফওয়াত আহমেদ ওয়াসির কাছে। হাসপাতাল কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু রোগীরা এলেও ডাক্তারের দেখা পাননি কয়েকদিন।

গত সোমবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক প্রতিবন্ধী ও পঙ্গু রোগী তাজপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল রিপোর্ট করাতে আসেন প্রতিবন্ধী ও পঙ্গু রোগীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মেডিকেল অফিসার সাফওয়াত আহমেদ ওয়াসির ২/৩ জন রোগীর মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করে বাকি সকল প্রতিবন্ধী ও পঙ্গু রোগীকে অন্য তারিখে রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরিয়ে দেন। একজন প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হলে একজন বা দুইজন লোক সঙ্গে আসতে হয়। অনেকে বিভিন্ন কাজ রেখে রিপোর্ট করানোর জন্য এলেও একের পর এক তারিখ দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানান একাধিক রোগী।

উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আসা প্রতিবন্ধী কলছুমা বেগমের পিতা আব্দুল জলিল বলেন, 'তাজপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েকবার আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি, কিন্তু ডাক্তার পাইনি। গত শনিবার ডাক্তার আমাদের বসিয়ে রেখে অনেকক্ষণ মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। পরে তিনি জানান আমার মেয়ের রিপোর্ট তাজপুরে হবে না, তাকে বালাগঞ্জে নিয়ে যেতে হবে।'

গত সোমবার বেলা দেড়টায় তাজপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মেডিকেল অফিসারকে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, অনেক রোগী অপেক্ষমান থাকলেও ডাক্তার ১১টার দিকে এসে ২/৩ জনকে দেখেই চলে গেছেন। মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলছেন। কমপ্লেক্সে আসা-যাওয়ার ব্যাপারে তিনি সরকারি সময়সূচি মানছেন না।

অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ডা. সাফওয়াত আহমেদ ওয়াসির বলেন, 'আমি তাজপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে ৩ দিন রোগী দেখি। অফিস সময়ের মধ্যে রোগী দেখছি। অতিরিক্ত রোগী হলে পরের তারিখে আসার জন্য বলা হয়।'

মাঝে মাঝে রোগী না দেখা বা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কমপ্লেক্স ত্যাগ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার অফিসিয়াল কাজের জন্য আমি অবশ্যই বাইরে যেতে পারি। তবে রোগীদের কোও প্রকার হয়রানি করছি না।' 

বালাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ওসমানীনগরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডাক্তার এস এম শাহরিয়ার বলেন, 'বর্তমানে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের ১৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র ৬ জন ডাক্তার দায়িত্বপালন করছেন। বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালেও প্রচণ্ড ডাক্তার সংকট রয়েছে। তাই ডাক্তারদের নিয়মিত অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে। এতে সময়সূচির হেরফের ও রোগী দেখতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।' 

 

ইউডি/আরআর-০৩