সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
০১:২৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
০১:২৪ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বীরাঙ্গনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও এলাকাছাড়া করার অভিযোগের মামলার ১ বছরের মাথায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে থাকা আসামির ছেলেসহ ৭ জনকে দণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার (৬ ডিসেম্বর) আদালতে উপস্থিত হয়ে আসামিরা আত্মসমর্পন করলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেলাল উদ্দিন অভিযুক্তদের ১৫ দিনের সাজা দিয়ে ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ দিনের দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বীরাঙ্গনারা।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- দিরাই উপজেলার শ্যামারচর এলাকার জলিল মিয়ার (যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে আছেন) ছেলে সুয়েব মিয়া, তারিছ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম, মছদ্দর মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, আব্দুর রহিমের ছেলে সবুজ মিয়া, শুকুর মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন, জালাল উদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়া এবং শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল বারি মোড়লের ছেলে কেকিম মোড়ল।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ এলাকার বীরাঙ্গনা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সংবর্ধনার উদ্যোগ নেয় ইউনিয়ন যুবলীগ। এর প্রতিবাদে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মাঠে এসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দিয়ে বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল কওরে এবং তাদের 'নষ্টা' আখ্যায়িত করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় শ্যামারচরের যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা এনামুল হক মাছুম দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৫০৬ (২য় খণ্ড) ধারার অভিযোগে আমল গ্রহণ করা হয়। এ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। গত ৩ মার্চ আদালত উক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। তবে চার্জ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণসহ বিভিন্ন ধাপে মামলার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা হলেও অভিযুক্তরা আদালতকে অবজ্ঞা করে কোনোদিন আদালতে হাজির হয়নি বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।
এদিকে বীরাঙ্গনাদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিলকারী যুদ্ধাপরাধীর ছেলেসহ ৭ জনকে দণ্ডাদেশ দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করার খবরে খুশি হয়েছেন সেদিনের ঘটনায় মর্মাহত বীরাঙ্গনারা। বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারা বেগম বলেন, 'আমরারে খারাপ খইয়া রেজাকারের ছাওয়ালরা মিছিল দিছিল। আজকু হাকিম সাব তারারে জেল দিছইন। আমরা খুউব খুশি অইছি।'
মামলার বাদী এনামুল হক মাছুম বলেন, 'আমরা বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। হঠাৎ যুদ্ধাপরাধীর ছেলে সুয়েব মিয়াসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বজনরা এসে আমাদের অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দেয়। পরে তারা বীরাঙ্গনাদের নষ্টা আখ্যায়িত করে এলাকাছাড়া করার হুমকি-ধমকি দিয়ে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। মাননীয় আদালত তাদেরকে দণ্ডাদেশ প্রদানের পর আজ কারাগারে প্রেরণ করেছেন। আমরা আদালতের রায়ে খুশি।'
মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী এডিশনাল পিপি নান্নু মিয়া বলেন, 'অভিযুক্তরা আদালতকে অবজ্ঞা করে কখনও হাজির হয়নি। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে গত ৩ মার্চ তাদেরকে ১৫ দিনের দণ্ড দিয়েছিলেন। ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ দিনের দণ্ড দেওয়া হয়। আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।'
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় গত ১ এপ্রিল 'দৈনিক কালের কণ্ঠ' পত্রিকায় ‘বীরাঙ্গনাদের এলাকাছাড়ার হুমকি রাজাকার সন্তানদের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বীরাঙ্গনাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছিল। পরে এ ঘটনা নিয়ে দেশের কয়েকটি বেসরকারি টিভিতে টক শো অনুষ্ঠিত হয়।
এসএস/আরআর-১২