সৌন্দর্য হারাচ্ছে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম

রাফিদ চৌধুরী


জানুয়ারি ০৮, ২০২১
০১:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৮, ২০২১
০৪:১২ অপরাহ্ন



সৌন্দর্য হারাচ্ছে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব

টিকেট কাউন্টারের পাশের ফটকে থাকা লোহার পাত উধাও। পাশের দেওয়ালে ইংরেজিতে লেখা ‘সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম’। বাক্যের সিলেট থেকে উধাও ‘এস’, স্টেডিয়ামের ‘ডি’ অক্ষরটি নেই। মাঠের এক কোণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ‘রেইন কভার’ এ জমে আছে পানি। সেটা ঘিরে বংশবিস্তার হচ্ছে মশার। আর গ্রিন গ্যালারি থেকে সবুজের বিলুপ্তি তো বহু পুরোনো কথা। শীতের পড়ন্ত বিকেলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

সিলেটের মালনীছড়া রেস্টক্যাম্প বাজারে নামলেই দেখা যায় বিমানবন্দর সড়ক ঘেঁষা স্টেডিয়ামের টিকেট কাউন্টার। কাউন্টারের পাশের দেওয়ালে ইংরেজিতে লেখা ‘স্টেডিয়াম’ থেকে দু’টি অক্ষর ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ায় স্টেডিয়ামের নামটিই যেন বদলে গেছে। টিকেট কাউন্টার থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত অনেকগুলো স্ট্যান্ডে অকেজো সড়কবাতি রয়েছে। অনেকগুলোর স্ট্যান্ডও নেই। প্রধান ফটকের ওপর লেখা স্টেডিয়ামের নামটিও উধাও।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এক টুকরো ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ভেতরে আবার সবুজে মিশ্রিত ‘গ্রিন গ্যালারি’। মিডিয়া বক্স কিংবা প্রেসিডেন্ট বক্সসহ সবকিছুই ব্যতিক্রম। যা বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেই। এসব ব্যতিক্রম আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম বিশেষ নজর কেড়েছিল। অনেক সৌন্দর্যের মধ্যে স্টেডিয়ামের নামটি সুন্দরভাবে লিখে রাখাও এক ধরনের সৌন্দর্য। সেটাই করা হয়েছিল সিলেটের এই স্টেডিয়ামের বেলায়। স্টিলের পাত দিয়ে সুন্দরভাবে খোদাই করা হয়েছিল নাম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কারণে সেই সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে।

সবুজরে বদলে গ্রিন গ্যালারি ধুসর রঙে ছেয়ে গেছে ‘গ্রিন গ্যালারি’।                          ছবি-সিলেট মিরর

 

যদিও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার বিষয়টি মানতে নারাজ ভেন্যু ব্যবস্থাপক জয়দীপ দাস। সিলেট মিররের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমরাও দেখেছি। কিন্তু যারা এটা নিচ্ছেন তাদেরও বুঝা উচিৎ এই স্টেডিয়াম সাধারণ মানুষের জন্যই। এই সৌন্দর্যও সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করার জন্যই। কিন্তু সেটা যদি মানুষ না বুঝেন তাহলে কি করার আছে! আমরা আবার সেগুলো সংস্কার করব ঠিকই, কিন্তু আবার তো মানুষ খুলে নিয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, এই স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য আমাদের সিলেটের সৌন্দর্যকে প্রতিনিধিত্ব করে- এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে।’

নিরাপত্তা ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামের বাইরের দিকে নিরাপত্তা বিশেষ সময় ছাড়া দেওয়া হয় না। তবে ফটকের সামনে নিরাপত্তা কর্মীরা আছেন। এমনকি মাঠের ভেতরের নিরাপত্তার দিকটাও আমরা বিশেষভাবে দেখভাল করে থাকি।’

সরেজমিন পরিদর্শকালে মাঠে প্রবেশ করে দেখা গেল, শুধু স্টেডিয়ামের নামই হারায়নি। হারিয়েছে মূল সৌন্দর্যও। স্টেডিয়ামের প্রধান আকর্ষণ গ্রিন গ্যালারি সবুজের বদলে ধূসর হয়ে গেছে। এর আগেও এমনটি হয়েছিল। সে সময় ঘাসের বীজ রোপণ করে সবুজ ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ চলাকালেও সবুজের বদলে গ্যালারি ছেয়েছিল বাদামি রঙে। তারপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন মাঠে খেলা বন্ধ থাকলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। ঘাস গজালেও পুনরায় ধূসর রঙ ধারণ করেছে। ভেন্যু ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, কাজ এখনও শেষ হয়নি। পুরো কাজ শেষ হলে গ্রিন গ্যালারি তার চেনা সৌন্দর্য ফিরে পাবে।

পিচ কাভার যেন পরিণত হয়েছে মশার প্রজননস্থলে।                                                               ছবি-সিলেট মিরর।

 

এদিকে, মাঠের দক্ষিণ পাশের এক কোণে ফেলে রাখা রেইন কভারের ওপরে পানি জমে গেছে। সেই পানিতে জমেছে শ্যাওলা। আর তাকে ঘিরে বংশবিস্তার করছে মশা। পিচ কভার দীর্ঘদিন ধরে মাঠের এক কোণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

যদিও ভেন্যু ব্যবস্থাপক জয়দীপ দাসের দাবি, স্প্লিংকার দিয়ে প্রতিদিন পানি দেওয়া হচ্ছে। সেটাই এসে জমা হচ্ছে রেইন কভারে।’

আরসি-০১