উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
জানুয়ারি ০৯, ২০২১
০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৯, ২০২১
০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
শেরপুর মাছের মেলা। সিলেট-মৌলভীবাজারের গ্রামীণ জীবনযাত্রায় এ মেলাটি ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর শীত এলে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ মেলার দিন গুনতে শুরু করেন। মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে এ মেলার আয়োজন করা হলেও দিনে দিনে তা সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে।
সিলেটের ওসমানীনগর ও মৌলভীবাজার সদরের মিলনস্থল শেরপুরে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এ মেলার। ধারাবাহিকভাবে চলে আসা প্রায় ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা মহামারি। এ বছর শেরপুর মাছের মেলা হবে না বলে ইতোমধ্যে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মাছের মেলাটি আগে মুনুমুখ বাজারে মনু নদীর তীরে বসলেও নদীভাঙন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ৫০/৬০ বছর পূর্বে স্থান পরিবর্তন করে শেরপুর ব্রাহ্মনগ্রামে নিয়ে আসা হয়। এর পূর্বে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় আরও একবার ছেদ পড়েছিল। ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে উদ্যোক্তার অভাবে মাছের মেলার আয়োজন করা হয়নি।
জানা গেছে, প্রতিবছর হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন শুরু হয়ে এ মেলা শেষ হয় সংক্রান্তির দিন ভোরে। মেলাকে কেন্দ্র করে মাসখানেক আগ থেকেই এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। মূলত মাছের মেলা হলেও বিভিন্ন তৈজস ও গৃহস্থালীসামগ্রী বিক্রেতারাও ভীড় জমান। সস্তা দরে মাছ থেকে শুরু করে গৃহস্থালীর সামগ্রী কিনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভীড় জমান। মেলায় বড় বড় মাছ প্রদর্শনীসহ বিক্রি হয়। কুশিয়ারা-সুরমা-মনু নদীসহ বিভিন্ন হাওরের বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড় মাছসহ দুষ্প্রাপ্য অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় মেলায়।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই কে কত বড় আকৃতির মাছ মেলায় ওঠাতে পারেন এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলে একধরনের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় হাওর, বাঁওড়, মাছের খামার ছাড়াও সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মারকুলি এবং দেশের বড় বড় আড়ৎ থেকেও মাছ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর মেলা না হওয়ায় এলাকার মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মেলায় বিক্রির জন্য অনেক ব্যবসায়ী মাসখানেক আগে থেকে বড় বড় মাছ হিমাগারে রেখেছেন। কিন্তু মেলা না হওয়ায় তারা এখন প্রমাদ গুনছেন।
আব্দুল আলিম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, 'কখনওই আমরা মাছের মেলা বন্ধ থাকতে দেখিনি। মাঝে-মধ্যে পরিসর ছোট-বড় হলেও মেলা হয়েছে প্রতিবছর। মাছ ব্যবসায়ীরা মুখিয়ে থাকেন শেরপুরের মাছের মেলার জন্য। এ মেলায় ২ দিনে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু এবার মেলা না হওয়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হবে।'
ইউডি/আরআর-১০