ইন্দোনেশিয়ান উড়োজাহাজের যাত্রীদের জীবিত থাকার আশা কম

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ১০, ২০২১
০২:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১০, ২০২১
০২:৩৬ অপরাহ্ন



ইন্দোনেশিয়ান উড়োজাহাজের যাত্রীদের জীবিত থাকার আশা কম

ইন্দোনেশিয়ায় সাগরে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে মানুষের শরীরে অংশও পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে আজ রবিবার (১০ জানুয়ারি) এ তথ্য জানানো হয়।

এএফপির খবরে জানা যায়, উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা বলছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে কাউকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা খুব কম। এ ছাড়া বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে সংকেত পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়।

জাকার্তা থেকে ওয়েস্ট কালিমান্তান প্রদেশের রাজধানী পনতিয়ানাকের উদ্দেশে শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে উড্ডয়নের চার মিনিট পরই রাডারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জাকার্তার সোকরানো হাত্তা বিমানবন্দর থেকে ১২ মাইল দূরে যাত্রীবাহী ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী বুদি কারিয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যার পর জানিয়েছিল, সোকরানো হাত্তা বিমানবন্দর থেকে ১২ মাইল দূরে যাত্রীবাহী ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

পরিবহনমন্ত্রী বুদি কারিয়া আরও জানিয়েছেন, জাকার্তার উত্তরের লাংকাং দ্বীপ ও লাকি দ্বীপের মধ্যবর্তী এলাকায় অনুসন্ধান কাজ চলছে। চারটি যুদ্ধজাহাজসহ বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজ এ অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

নৌবাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সাগরে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান খুঁজে পেয়েছেন তারা। সাগরের যে এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই এলাকায় নৌযানও মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলছেন, বিমানটিকে বিধ্বস্ত হতে দেখেছেন তারা। কমপক্ষে একবার তারা বিষ্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এছাড়া সাগরের ওই এলাকা থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও জামা কাপড়ের টুকরো পাওয়া গেছে। 

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত ও বিষ্ফোরিত হওয়ার সময় সেখানে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় জেলে সলিহিন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘উড়োজাহাজটি বজ্রপাতের মতো সাগরে বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা বিষ্ফোরিত হয়।’

উড়োজাহাজটি সাগরের যেই অংশ থেকে নিখোঁজ হয়েছে, তার পাশের একটি দ্বীপের বাসিন্দারা বিবিসি বলেন, তারা এমন কিছু বস্তু খুঁজে পেয়েছেন যা বিধ্বস্ত হওয়া ওই উড়োজাহাজের অংশ বলেই তাদের ধারণা। 

ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াহিউদ্দিন আরিফ আইনিউজকে বলেন, তাঁরা তিন ফুট লম্বা টায়ারের অংশ খুঁজে পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের। এ ছাড়া মানবশরীরে অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বলছে, শনাক্তের জন্য মানবশরীরের অংশ পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

উদ্ধারকাজে নিয়োজিত এক ডুবুরি কম্পাস টিভিকে জানান, পানির নিচে মেটাল ডিটেক্টর ও পিঞ্জার ডিটেক্টর (পানির নিচে উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র) দিয়ে উড়োজাহাজের দুটি ব্ল্যাকবক্স থেকে সংকেত খোঁজার চেষ্টা চলছে।

রয়টার্সের খবরে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান হাদি তাজাহজান্তোর বরাত দিয়ে দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, উদ্ধারকারী জাহাজ শ্রীবিজয়া এয়ারের মডেল বোয়িং ৭৩৭-৫০০ থেকে সংকেত পেয়েছে। ডুবুরিরা পানি থেকে ৭৫ ফুট নিচে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। তবে এই সংকেত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্সের কি না, তা নিশ্চিত করে বলেনি পরিবহন মন্ত্রণালয়।

শনিবার দুপুরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাত পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। রাতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ছিল। আজ সকালে অনুসন্ধান আবার শুরু হয়েছে। 

শনিবার উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার পর দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি টহল নৌকা দুর্ঘটনাস্থল থেকে মানবদেহের কিছু অংশ খুঁজে পায় বলে জানিয়েছিল স্থানীয় গণমাধ্যম কম্পাস।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার হওয়া কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে নিখোঁজ উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ বলে মনে হচ্ছে। কিছু ধ্বংসাবশেষের ছবি ইন্দোনেশিয়ার টেলিভিশনগুলোতেও প্রচার করা হয়েছে।

এয়ারলাইন থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ফ্লাইটটিতে মোট ৫৬ জন যাত্রী, দুজন পাইলট ও চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। তাদের সবাই ইন্দোনেশীয় নাগরিক বলে জানিয়েছে দেশটির ট্রান্সপোর্ট সেফটি কমিটি।

বিগত ২৭ বছর ধরে বহরে থাকলেও দুর্ঘটনার পর শ্রীবিজয়া এয়ারের প্রধান নির্বাহী জেফরসন ইরউইন জাউয়েনা বলেন, উড়োজাহাজটির সার্বিক অবস্থা ভালো ছিল। ফ্লাইট ৩০ মিনিট দেরি হয়েছিল ভারী বৃষ্টির কারণে।

২০১৮’র অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স সাগরে বিধ্বস্ত হলে ১৮৯ আরোহীর মৃত্যু হয়। তবে এই ফ্লাইটটি বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স নয়, যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছে।

 

এএফ/