নবীগঞ্জে বাস চাপায় নিহতদের সরকারী ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
০১:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
০১:২৩ অপরাহ্ন



নবীগঞ্জে বাস চাপায় নিহতদের সরকারী ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের ফুলতলি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

সরকারি ক্ষতিপূরণের ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হলেও ক্ষতিগ্রস্থ ৮ পরিবারের নিকট থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয় এলাকার আব্দুল মন্নাফ ও আবু শ্যামা নামের দুই ব্যক্তি। এর মাঝে আব্দুল মন্নাফ স্থানীয় মুশকিল হাসান মাজার কমিটির ক্যাশিয়ার এবং আবু শ্যামা ফুলতলি বাজারের ব্যবসায়ী।  স্থানীয়ভাবে ওই দুই ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় নিহতের ৮ পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ হাজার করে এবং আহতদের নিকট থেকে ৫শ করে টাকা হাতিয়ে নেয়।

মুড়াউড়া গ্রামের নিহত ছামিরুন্নেসার স্বামী আবু তাহের ও নিহত হালিমা আক্তারের স্বামী আবু সামা অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর বিআরটিসি বাস দুর্ঘটনা কবলিত হলে ৮ জন নিহত হয়। বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের ৮ পরিবারের নিকট ৩৫ হাজার টাকা করে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং আহতদের জন্য ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। গত শনিবার নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি দেওয়ান মিলাদ গাজীর উপস্থিতিতে ফুলতলি বাজারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন। কিন্তু ওই দিনই অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মন্নাফ ও আবু শ্যামা ওই ৮ পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে ২ হাজার করে টাকা দিতে বলেন। কেন টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে তারা সদোত্তর না দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে নিহত ৮ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই ২ হাজার টাকা করে তাদেরকে দেন। 

সাতাইয়াল গ্রামের নিহত সোহেল মিয়ার বড় ভাই রুবেল মিয়া ও সাতাইয়াল দক্ষিণ কুর্শা গ্রামের নিহত লিটন আলীর বড় ভাই রুপন আলী একই অভিযোগ করে বলেন, মন্নাফ ও শ্যামা অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচ হিসেবে এ টাকা দিতে হবে বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সকলকে ভয়ভীতি দেখিয়েই এ টাকা নিয়েছে।

খবরটি জানাজানি হলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়।

জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আওয়ামিলীগ নেতার ছত্রছায়ায় অভিযুক্তরা এ অপকর্ম করেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল মন্নাফ জানান, টাকা আমি নেইনি, সাবেক মেম্বার হোসাইন কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার জমসেদ আলী আমাকে টাকা নিতে বলেন এবং স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আবু শ্যামার দোকানে বসেই টাকা নেওয়া হয়। পরে এ খবরটি শুনে গ্রামবাসি আপত্তি জানালে টাকাগুলো আমার কাছে এখনও আছে। দুই একদিন পর পঞ্চায়েতের মিটিং আছে। আলোচনা করে আমি টাকা ফেরত দিয়ে দেব।

এ বিষয়ে আবু শ্যামা বলেন, আমি টাকা নেইনি। আমি দোকানদার। আমার দোকানে বসে তারা টাকা নিয়েছে। টাকা নেওয়ার আলোচনায় ছিলাম না। 

এ বিষয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে তিনি বলেন, যারা টাকা নিয়েছেন ঠিক করেন নি। 

এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার জমসেদ আলী জানান, আমি কাউকে টাকা নিতে বলেনি। অনুষ্ঠান করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তা গ্রামের ফাণ্ড থেকে হওয়ার কথা। আব্দুল মন্নাফ হচ্ছেন ক্যাশিয়ার। তিনি টাকা নিয়েছেন কি না তিনিই ভালো জানেন।

এসআর/বিএ-০৪