পরিবেশ দূষণ : মাধবপুরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সিলগালা

মাধবপুর প্রতিনিধি


এপ্রিল ২১, ২০২১
১০:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০২১
১০:৫৪ অপরাহ্ন



পরিবেশ দূষণ : মাধবপুরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সিলগালা

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় অবস্থিত পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান 'মার লিমিটেড' সিলগালা করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। ওই কারখানায় সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার লিমিটেডের কারখানা বন্ধ করা হলো।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, 'পরিবেশ দূষণের অভিযোগে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা উচ্চ আদালতের একটি মামলা দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ওই কারখানা সিলগালা করা হয়েছে।'

জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুরের শাহপুর এলাকায় অবস্থিত পরিবেশ দূষণকারী মার কোম্পানি লিমিটেডের অপরিশোধিত দূষিত বর্জ্য একটি পাহাড়ি ছাড়ায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সেখানকার পানি পান করে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু-পাখি ও নানা ধরনের জীব। দূষিত বর্জ্য বিভিন্ন খালে নিক্ষেপ হয়ে কৃষিজমি, মৎস্য, নদ-নদীর পানি ও মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতৃবৃন্দ জানান, এ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের এক্তিয়ারপুর গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছেন। তারা মানববন্ধন ও বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান এসবে কর্ণপাত না করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম।

এ বিষয়ে এক্তিয়ারপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ব পানি দিবসে পাহাড়ি ছড়ার বর্জ্যে দূষিত পানি পান করে মারা গেছে এক্তিয়ারপুর গ্রামের কৃষক রেনু মিয়ার একটি গবাদি পশু। এ পশুটির মৃত্যুর জন্য মার কোম্পানি লিমিটেডকে অভিযুক্ত করে ইউএনওর নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, 'অপরিকল্পিত শিল্প দেশের উন্নয়ন নয়, বরং ধ্বংস ডেকে আনে। হবিগঞ্জ অঞ্চল তার উদাহরণ। শুরু থেকেই কোম্পানিটির উৎসে বর্জ্য শোধনাগার করে পরিকল্পিতভাবে পরিশোধন করার কথা বলে এলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। যার কারণে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক বৈঠকে মার কোম্পানির উৎসে বর্জ্য পরিশোধনাগারের ব্যবস্থা না থাকায় কোম্পানিটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কোম্পানির উৎসে বর্জ্য শতভাগ পরিশোধন হয়ে বাইরে নিক্ষেপ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে কোম্পানির ইটিপি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এসেছিলেন কিছুদিন পূর্বে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন বর্জ্য শতভাগ পরিশোধন হচ্ছে না।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা বলেন, 'গতকাল সোমবার চেম্বার জজে কোম্পানির দায়ের করা আপিলের শুনানি ছিল। কিন্তু ওই শুনানি না হয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল পরিবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে পূর্বের আদেশ বহাল থাকায় আজ প্রশাসনের উদ্যোগে কোম্পানিটি সিলগালা করা হয়েছে।'

উল্লেখ্য, মার কোম্পানি লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি মূলত ড্রাই স্টার্চ পাউডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কারখানার কার্যক্রমের ফলে প্রচুর পরিমাণে তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটিতে নামমাত্র ইটিপি থাকলেও তা ব্যবহার না করে দূষিত বর্জ্য পার্শ্ববর্তী খালে ছেড়ে দেওয়ায় পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে।

 

এসএম/আরআর-০৩