বাদাম চাষে ঝুঁকেছেন হাকালুকির কৃষকরা

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


মে ০১, ২০২১
১১:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০২, ২০২১
১১:০৬ অপরাহ্ন



বাদাম চাষে ঝুঁকেছেন হাকালুকির কৃষকরা

এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। এই হাওরেই এখন হচ্ছে বাদামের চাষ। ভালো ফলন ও লাভ দেখে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের দাবি, সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা বাদাম চাষকে আরও এগিয়ে নিতে পারবেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এখন বাদাম নিয়ে আশার আলো দেখছেন। 

তবে এ বছর বিরূপ আবহাওয়া থেকে বাদামকে রক্ষা করতে আগেভাগেই বাদাম তুলে ফেলার জন্য চাষিদের জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাদামের ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য কৃষকরাও বাদাম তোলা শুরু করেছেন। আর যারা একটু উঁচু জমিতে বাদাম চাষ করেছেন, তারা আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করবেন। 

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে হাকালুকি হাওরে থৈ থৈ পানি থাকে। সেখানে শীত মৌসুমে রবিশস্যের সবুজের সমারোহ। পুরো হাওরের এই সবুজ প্রকৃতি মন কাড়ে যে কারও। এই দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষজন। 

সরেজমিনে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও এলাকার হাকালুকি হাওরের অংশে গেলে দেখা যায়, পুরো এলাকাজুড়ে ফসলের সারিবদ্ধ মাঠ সবুজে ভরপুর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আকর্ষণীয় বাদাম ক্ষেতের মাঠ। নিজ নিজ ক্ষেতে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে। এ সময় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকবছর থেকে হাওরের বুকে বাদামের চাষ হয়ে আসছে। কম খরচে ফলন ভালো হওয়ায় বেশিরভাগ চাষি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন বাদাম চাষে নজর দিচ্ছেন। 

এ সময় বাদাম চাষি শাহ জাহান বলেন, 'গত ৫ বছর থেকে আমি বাদাম চাষ করছি। এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে আমার। এ বছর ১ কিয়ার জায়গায় বাদামের চাষ করেছি। গতবছর প্রতি কেজি বাদাম খুচরা ৯০ টাকা ও পাইকারি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। এ বছর আশা করছি সাত থেকে আট মণ বাদাম উৎপাদন হবে।' 

আরেক চাষি সাইফুল আলম ৩০ শতক জায়গায় বাদামের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি দুবাইতে থাকতাম। দেশে এসে আমাদের জায়গায় ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি চাষ শুরু করি। বিশেষ করে গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে বাদাম ও সূর্যমুখী চাষ করছি। এগুলো চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি।'

সাইফুল আরও বলেন, 'সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করি না। সারা বছর এই তেল দিয়ে আমাদের পরিবার চলে। আর বাদাম কিছু বিক্রি করে ফেলি। বাকিগুলো নিজেদের জন্য রেখে দেই। আশা রাখি এবারও লাভবান হবো। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর।' 

মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৪৯ হেক্টর জায়গায় বাদামের চাষ হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক চিনা বাদাম বারি-৮ ও বারি-৪ রোপণ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও এসব এলাকার মাটি বাদাম চাষের উপযোগী হওয়ায় গত চার-পাঁচ বছর থেকে ভালো ফলন হচ্ছে বাদামের।'

জুড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, 'উপজেলায় এ বছর ১১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে হাকালুকি হাওরে। বাদামের চাষ বেলে ও দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে।'

তিনি বলেন, 'সামনের দিনগুলোতে ঘূর্ণিঝড়সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে হাওর এলাকায় বন্যা হয়ে যায়। এতে বাদামের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কষ্টের ফসল যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা কৃষকদের বাদাম তুলে ফেলতে বলেছি। অনেকেই ইতোমধ্যে বাদাম তোলা শুরু করছেন।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, 'বাদাম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। জেলায় ধীরে ধীরে বাদাম চাষের চাহিদা বাড়ছে। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হচ্ছে। রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।'

 

এসএইচ/আরআর-০৩