এ.জে লাভলু, বড়লেখা
মে ১৭, ২০২১
০৫:১৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ১৭, ২০২১
০৫:১৬ পূর্বাহ্ন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধজ্ঞা রয়েছে। ফলে ঈদের ছুটিতে মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গত তিনদিনে প্রায় ৬ হাজার পর্যটক জলপ্রপাতের প্রধান ফটক থেকে ফিরে গেছেন। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হতাশ। কারণ তাদের বেচাকেনা কম হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জলপ্রপাতের প্রধান ফটক খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম জলপ্রপাত হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড। প্রতিবছর ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নামে। এতে জলপ্রপাতকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বেশ জমে ওঠে। কিন্তু চলতি বছরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ এপ্রিল থেকে সেখানে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে এবারের ঈদের ছুটিতে সেখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জলপ্রপাতের কাছে যেতে পারছেন না। ঈদের প্রথমদিন গত শুক্রবার থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার পর্যটক মাধবকুণ্ডে ঘুরতে এসেছিলেন। কিন্তু জলপ্রপাতের প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ফটকের সামনে মানুষ ভিড় করছেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মাধবকুণ্ডে ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ কেউ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পর্যটকরা ফিরে যাওয়ায় ব্যবসীয়দের বেচাকেনা কম হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ফটকের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল কয়েকজন নারী-পুরুষ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জলপ্রপাতের কাছে যাচ্ছেন। তাদের নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলতে রাজি হননি। তারা বলেন, আমরা খাসিয়াপুঞ্জির ভেতরে দিয়ে এখানে এসেছি। কাউকে কোনো টাকা দিতে হয়নি। আমাদের বাড়ি বড়লেখার দক্ষিণভাগ এলাকায়। এখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জানেন কি না জানতে চাইলে তারা কোনো কিছু না বলেই সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান।
সিলেট থেকে মাধবকুণ্ডে ঘুরতে এসেছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান ও সোহেল আহমদ। তারা ফটকের কাছে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তারা বলেন, মাধবকুণ্ডে আগে কখনও আসা হয়নি। এবার প্রথমবার এসেছি। করোনার কারণে এটি যে বন্ধ রয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। জানলে এত দূর থেকে আসতাম না। পুলিশ আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। তাই আমরা চলে যাচ্ছি।
স্থানীয় ফটোগ্রাফার রুজেল আহমদ বলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসছেন। কিন্তু তারা জলপ্রপাতের ভেতর ঢুকতে পারছেন না। এজন্য তারা চলে যাচ্ছেন। আমরা তাদের ছবি তুলে কিছু টাকা আয় করি। কিন্তু তা খুব সামান্য। এটি খুলে দিলে ভালো হবে। আমাদের আয় বাড়বে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কবির আহমদ ও আলী হোসেন বলেন, এখন ভরা মৌসুম। অথচ আমাদের বেচাকেনা নেই বললেই চলে। গত বছরেও করোনার কারণে এটি বন্ধ ছিল। আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। এবারও আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফটক খুলে দেন। এতে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) প্রনীত চাকমা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাধবকুণ্ডে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিষয়টি অনেকেই জানেন না। তাই তারা ঈদের ছুটিতে মাধবকুণ্ডে ঘুরতে আসছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছি। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক এখানে আসছেন। আমরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যটকের নিরাপত্তায় পুলিশ সবসময় কাজ করছে।
এজে/আরআর-০৭