সিলেট ভোক্তা অধিদপ্তরে বাড়ছে অভিযোগ, মিলছে পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ১৯, ২০২১
০৩:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১৯, ২০২১
০৩:০৪ পূর্বাহ্ন



সিলেট ভোক্তা অধিদপ্তরে বাড়ছে অভিযোগ, মিলছে পুরস্কার
৭ বছরে জরিমানা আদায় ১ কোটি ৬৮ লাখ

সিলেটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রতিনিয়ত অভিযোগের সংখ্যা। বাড়ছে অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানা আদায়ের হার। অভিযোগ করে অনেকেই পুরস্কারও পেয়েছেন।

সম্প্রতি নগরের একটি দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন রাফি নামের এক যুবক। অভিযান চালিয়ে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জরিমানা করে অধিদপ্তর। নিয়ম অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ ঐ যুবককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা আদায় জরিমানা হয়েছে। যা আগের ৬ বছরে আদায়কৃত জরিমানার চেয়েও বেশি।

জানা গেছে, সিলেটে ২০১৪ সাল থেকে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। গত প্রায় ৭ বছরে ৬শ এর অধিক অভিযান পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়মিত অভিযান ও ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগ পড়েছে ৩৮০ টি। 

অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জনবল সংকটে থাকায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মাত্র ৬ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ওই বছরের এপ্রিলে একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়ায় আরও ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ২৫ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ ভোক্তাকে প্রদান করা হয়।

২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২৫টি অভিযান পরিচালনা করে ১৩৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তদারকির আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে ১০৯টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ টাকা। ওই বছর ১২টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে আরও ৮৩ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়, যার শতকরা ২৫ শতাংশ হিসেবে অভিযোগকারীদের ২০ হাজার ৮৭৫ টাকা প্রদান করা হয়।

এরপর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তাদের কার্যপরিধি বৃদ্ধি পায় আরও কয়েকগুণ। এ বছরে ৮০টি অভিযান পরিচালনা করে ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৭শ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ২৬টি অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৩৪ হাজার ৩শ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগকারীদের ৭ হাজার ৯৫০ টাকা প্রদান করা হয় ।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ৬৪ টি অভিযান পরিচালনা করে ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ লাখ ২ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় ৭১টি। যা থেকে আরও ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পাশাপাশি অভিযোগকারীদের ৩৬ হাজার ৩শ ২৫ টাকা দেওয়া হয় ।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছওে সিলেটে অভিযান আরও বাড়ানো হয়। এ বছর ১১৫টি বাজার অভিযান পরিচালনা করে ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঐ বছর ১০২ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪শ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগকাদের ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা দেওয়া হয়।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, লবন নিয়ে গুজব প্রতিরোধে কাজ করে ভোক্তা অধিদপ্তর। এতে ১৬৩টি অভিযান পরিচালনা করে ৪৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ১০৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ৩৫ হাজার ৭৫০ টাকা প্রণোদনা হিসেবে অভিযোগকারীদের দেওয়া হয়।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১৪৫ টি অভিযান পরিচালনা করে ২৯৩ টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ৫৫ টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যার ২৫ শতাংশ হিসেবে অভিযোগকারীদের দেওয়া হয়।

তবে, পরবর্তী দুই মাসে আরও প্রায় ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ।

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে অধিদপ্তর নিজেদের কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে গত ১০ মাসে যে পরিমাণ জরিমানা আদায় হয়েছে তা বিগত ৬ বছরের প্রায় সমান।’ জনস্বার্থে অধিদপ্তরের সবধরনের কার্যক্রমে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্ত বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি। যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তারা হয়তো অন্য পণ্য কিনতে গিয়ে নিজেরা ভেজাল কিনছে। এভাবে প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আমরা চাই না কোন নাগরিকই প্রতারণার শিকার হোক।’ ভোক্তার সঙ্গে যেকোন ধরনের প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি দাবি জানান।

এসএইচ/আরসি-০১