বদলি করা হলো কোম্পানীগঞ্জের সেই নার্সকে

কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ


মে ২১, ২০২১
০২:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২১, ২০২১
০২:৫২ পূর্বাহ্ন



বদলি করা হলো কোম্পানীগঞ্জের সেই নার্সকে

অবশেষে বদলি করা হয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত বিতর্কিত মিডওয়াইফ নার্স হালিমা বেগমকে। বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে তাকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে অপসারণ করে বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। 

ঈদুল ফিতরের দিন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে মাস্ক না পরে দায়িত্বপালন, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়া এবং দৈনিক সিলেট মিররসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে নার্স হালিমাকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গতকাল বুধবার (১৯ মে)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে হালিমা বেগমের হাতে তার বদলির চিঠি তুলে দেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, অভিযুক্ত নার্স হালিমাকে বিশ্বনাথ উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে ডা. কামরুজ্জামান জানান, সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এমনকি মামলাও হতে পারে।

হালিমার বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের জুগিরগাঁও গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর মেয়ে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছিলেন নার্স হালিমা বেগম। গত শুক্রবার (১৪ মে) ঈদুল ফিতরের দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৫ দিন বয়সী এক শিশুকে ডিসচার্জ করার ব্যাপারে কথা বলতে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষে যান স্থানীয় এক যুবক। তখন কোনো চিকিৎসক না থাকলেও সেখানে বসা ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ নার্স হালিমা বেগম। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক ছাড়াই হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এ সময় রোগীর স্বজন ওই যুবক হালিমাকে মাস্ক পরিধানের জন্য অনুরোধ জানান।

এ কথা শুনে তাৎক্ষণিক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন নার্স হালিমা। তিনি চিৎকার করে বলেন, 'আমি মাস্ক পরব না। কী সমস্যা? আমি মাস্ক পরব কি পরব না, সেটা বলার তুই কে?' রোগীর স্বজন আবারও ওই নার্সকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানালে তিনি আরও চটে যান। এ সময় নার্স হালিমা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তার চিৎকার শুনে হাসপাতালের স্টাফ এবং হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্মেসির দালালরাও ছুটে আসে। এ সময় সকিনা বেগম নামে হাসপাতালের এক স্টাফ বার বার হালিমাকে চুপ করার জন্য অনুরোধ জানালেও তা কানে নেননি ওই নার্স।

খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। হালিমা এ সময় সংবাদকর্মীদের ওপর হামলে পড়েন। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কটুক্তি এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন নার্স হালিমা বেগম। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন প্রভাকর রায় নামে এক চিকিৎসক। তিনি ঘটনাটি জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, নার্স হালিমা বরাবরই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি করোনা মহামারির এই সময়ে মাস্ক পরিধান না করে দায়িত্বপালন করে নিজেকে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের হুমকির মুখে ফেলছিলেন ওই নার্স।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক বলেন, হালিমা মেয়েটি আসলেই বেয়াদব। তার বিরুদ্ধে অনেক লিখিত অভিযোগ হাসপাতালে এসেছে। এর আগেও সে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং এক সহকর্মীর গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। 

এদিকে, ভুক্তভোগী ওই যুবক তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানান সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলকে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয় বেপরোয়া নার্স হালিমাকে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই শোকজের চিঠিতে স্থানীয় সাংবাদিক এবং ভর্তি রোগীর স্বজনের সঙ্গে অসদাচরণমূলক উক্তি ও খারাপ আচরণের ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করা হলেও করোনা মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক পরিধান না করে দায়িত্বপালন করার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে সেই শোকজের জবাব দেননি নার্স হালিমা।

 

এমকে/আরআর-০৮